সুন্দরবন রহস্য

সুন্দরবন রহস্য: আলোর পথে প্রেম

বিষাদের জোয়ার

গোসাবার জেটিতে আজ অন্যরকম নীরবতা। ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢাকা, নদীর জল যেন গভীর দুঃখের প্রতীক হয়ে ফুঁসছে। রবি সেনগুপ্ত জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল, তার হাতে একটি জীর্ণ ডায়েরি আর গলায় ঝোলানো পুরনো ক্যানন ক্যামেরা। এক বছর হয়ে গেল। এক বছর আগে এই জেটি থেকেই তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর এই জেটিই দেখেছিল ঊর্মির চিরতরে হারিয়ে যাওয়া।

ঊর্মিমালা, রবির প্রেমিকা। শুধু প্রেমিকা বললে ভুল হবে, সে ছিল রবির জীবনের একমাত্র অনুপ্রেরণা। প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা, তার চোখে বনের আদিম রহস্যের প্রতি কৌতূহল—সবকিছুই রবিকে আকর্ষণ করত। তারা দু’জনেই ‘আলোর মন্দির’-এর রহস্য উন্মোচন করতে এসেছিল। রবি ছিল গবেষক, ঊর্মি ছিল কবি। রবি প্রমাণ খুঁজত, আর ঊর্মি খুঁজত সেই রহস্যের ভেতরের জীবনদর্শন।

রবি ডায়েরিটা খুলল। সেখানে ঊর্মির হাতের লেখায় শেষ কথাগুলো লেখা: “রবি, আলোটা মিথ্যে নয়। এর গভীরে কি জানি এক আহ্বান আছে, যা আমাকে টানছে। এ শুধু পাথর বা শৈবাল নয়, এর একটা আত্মা আছে। আমি সেই আত্মার সঙ্গে কথা বলতে যাব। তুমি ভয় পেও না। যা সত্য, তা ফিরবেই।”

sundarban rahashya 5

রবি ডায়েরিটা বুকের কাছে চেপে ধরল। সে জানে, সেদিনের সেই আবিষ্কার, সেই ফসফোরেসেন্ট খনিজ বা উল্কাপিণ্ড—সবই ছিল একটা মিথ্যা প্রলেপ। আসল রহস্য ছিল অন্য কোথাও। ঊর্মির নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ, বনবিভাগ—সবাই বলল, বাঘের পেটে গেছে, বা কুমিরের শিকার হয়েছে। কিন্তু রবি জানে, ঊর্মিমালা কোনোদিনও প্রকৃতির শিকার হতে পারে না। সে নিজে থেকে হারিয়ে গেছে, হয়তো কোনো গোপন সত্যের সন্ধানে।

পিছন থেকে এসে দাঁড়াল ধনঞ্জয়। তার চোখে গভীর উদ্বেগ। “বাবু, আর কতদিন এইভাবে নিজেকে কষ্ট দেবেন? চলেন, ফিরে চলেন। এই জঙ্গলটা শুধু শিকার করে না, স্মৃতিকেও গ্রাস করে নেয়।”

রবি ফিরল না। তার চোখ স্থির নদীর স্রোতে। “ধনঞ্জয়, এক বছর আগে যখন আমি ঊর্মিকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম, তুমি বলেছিলে ‘আলোর মন্দির’ হচ্ছে ‘দেও-এর আলো’। তুমি ভয় পেয়েছিলে। কিন্তু এখন আমি জানি, দেও-এর আলো না, সেটা ছিল ঊর্মির আলোর পথের ইঙ্গিত। ও যায়নি, ওকে কেউ ডেকে নিয়েছে।”

ধনঞ্জয় মাটিতে মাথা নিচু করল। “সেদিন রাত্রে, নৌকার পালে যখন হঠাৎ বাতাস থমকে গেল, আর ওই সবুজ আলোটা যখন আমাদের ডিঙি লক্ষ্য করে নেমে এল, তখন আমি দেখেছিলাম। ঊর্মিমালার চোখে কোনো ভয় ছিল না, ছিল এক অদ্ভুত শান্তি। যেন সে অনেকদিনের চেনা কিছুর দিকে ফিরে যাচ্ছিল।”

রবির বুকটা ধক করে উঠল। এই কথা ধনঞ্জয় আগে কখনো বলেনি।

“তুমি কেন বলোনি এসব আগে?”

ধনঞ্জয় কাঁপা গলায় বলল, “বললে কি আপনি বিশ্বাস করতেন? ভয় হতো, বনদেবী রেগে যাবেন। কিন্তু আজ বলছি, বাবু। ওই গভীর জঙ্গলের গভীরে এমন একটা পথ আছে, যেখানে রক্ত মাংসের মানুষ হেঁটে যায় না, হেঁটে যায় শুধু আত্মার ছায়া। আমরা সেখানেই যাব। আমি জানি, আপনি এবার শুধু তথ্য খুঁজতে আসেননি, আপনি আপনার ভালোবাসার খোঁজ করতে এসেছেন। আমার ডিঙি প্রস্তুত। তবে এবার আমরা যাব একদম অন্য পথে, যে পথে বাঘের চেয়েও বড় ভয় লুকিয়ে আছে – সুন্দরবনের দীর্ঘশ্বাস।”

রবি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। তার চোখে এখন আর বিষাদ নেই, আছে এক শীতল প্রতিজ্ঞা। “চলো ধনঞ্জয়। এবার আমরা শুধু মন্দির নয়, সেই রহস্যের দরজাটা খুঁজব।”

তারা দুজন নদীপথে পা বাড়াল। পিছন থেকে গোসাবার জনবসতি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগল। ম্যানগ্রোভের জালের মধ্যে ঢুকে গেল তাদের ছোট্ট ডিঙি। রবির মনে তখন একটাই চিন্তা—ঊর্মি কি তাকে ভুলে গেছে, নাকি কোথাও অপেক্ষা করে আছে তার ফিরে আসার জন্য?

ঘন অরণ্যে প্রবেশের মূল্য

দ্বিতীয় দিন, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সূর্য তখন মাথার উপরে। নদীর লবণাক্ত বাতাস আর কাদার তীব্র গন্ধ। রবি আর ধনঞ্জয়ের ডিঙিটি এমন একটি খাঁড়ির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে জল আর স্থলের পার্থক্য প্রায় নেই। চারপাশের ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূল (Pneumatophore) যেন হাজার হাজার ধারালো তীর হয়ে জল ভেদ করে আকাশের দিকে উঠে গেছে। জায়গাটা এত ঘন যে সূর্যের আলোও ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারছে না, দিনের বেলায়ও এক গা ছমছমে অন্ধকার।

“বাবু,” ধনঞ্জয় ফিসফিস করে বলল, “আমরা এখন এমন এক জায়গায়, যেখানে বাঘ বা কুমিরকেও সাবধানে চলতে হয়। এই পথেই নাকি ‘আলোর মন্দিরের’ দিকে যাওয়ার গোপন পথ শুরু হয়েছে, যেটা শুধু জোয়ারের সময় সামান্য খোলে।”

রবি তার বাইনোকুলার চোখে লাগাল। দেখল, তাদের সামনে নদীর স্রোত হঠাৎ করেই যেন মিলিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে জল যেন কোনো অদৃশ্য দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে স্থির হয়ে আছে। সে বলল, “কিন্তু আমরা তো এখনও সেই টিলাটার কাছেও আসিনি, যেখানে উল্কাপিণ্ডটা ছিল।”

“সেই টিলাটা হলো একটা ফাঁদ, বাবু। একটা সাবধানবাণী। আসল পথ আরও গভীরে। আমি অনেক শুনেছি আমার পূর্বপুরুষদের কাছে। এইখানে একবার জল কমলে, আর বের হওয়া যায় না। তাই আমাদের দ্রুত কাজ সারতে হবে।”

ধনঞ্জয় একটি লম্বা বাঁশ দিয়ে সাবধানে সামনে পথ তৈরি করতে লাগল। তাদের ডিঙিটি এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে ভেতরে ঢুকছে, আর শ্বাসমূলের ডগায় লেগে তৈরি হচ্ছে কড় কড় শব্দ। এই শব্দ যেন বনের নীরবতাকে আরও প্রকট করে তুলছে।

হঠাৎ ধনঞ্জয় বাঁশটা ফেলে দিয়ে কাঁপা হাতে রবির হাত ধরল। “বাবু, চুপ! ওটা কিসের গন্ধ?”

রবির নাকে এলো এক তীব্র, মিষ্টি গন্ধ। অনেকটা বন্য ফুলের মতো, কিন্তু তার মধ্যে মেশানো আছে কিসের যেন পচা, ভারী সুবাস। সেই গন্ধ যেন মস্তিষ্ককে ঝিমঝিম করে দিচ্ছে।

“এটা কি কোনো ফুলের?” রবি জিজ্ঞেস করল।

“না, বাবু। এটা ‘দীর্ঘশ্বাসের ফুল’। আমার ঠাকুমা বলতেন, এটা বিষের গন্ধ। যে এই গন্ধ একবার শোঁকে, তার সব ভয়, সব দুঃখ মুহূর্তে উবে যায়। সে তখন বনের গভীরে নিজের ইচ্ছায় যেতে চায়। এইটা হলো সুন্দরবনের সবচেয়ে বিপজ্জনক আকর্ষণ।”

কথা শেষ না হতেই রবি দেখল, ধনঞ্জয় ধীরে ধীরে তার মুখের দিকে এক অদ্ভুত হাসি নিয়ে তাকাচ্ছে। তার চোখে আর ভয় নেই, আছে এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সে ডিঙি থেকে নেমে কাদার মধ্যে পা ডুবিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইল।

“ধনঞ্জয়, দাঁড়াও! কী করছো তুমি?” রবি চিৎকার করে উঠল।

ধনঞ্জয় হাসিমুখে বলল, “আহা, কী শান্তি! সব চিন্তা শেষ, বাবু। ওদিকে কত আলো! চলেন যাই, ঊর্মি তো সেখানেই আছে। সে তো সুখ খুঁজে পেয়েছে, আমাদেরও যেতে হবে।”

রবি বুঝতে পারল, এটা ওই ফুলের গন্ধের প্রভাব। তাকে দ্রুত কিছু করতে হবে। সে পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে নিজের নাকে চেপে ধরল। তারপর লাফ দিয়ে ডিঙি থেকে নেমে, কাদার মধ্যে দিয়ে ছুটে গিয়ে ধনঞ্জয়কে টেনে ধরল। ধনঞ্জয়ের শরীরে অবিশ্বাস্য জোর, সে যেন সম্মোহিতের মতো সামনের অন্ধকারে যেতে চাইছে।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ধনঞ্জয়ের কাঁধের ব্যাগ থেকে একটি লোহার কুরুশ (Hook) কাদায় পড়ে গেল। রবি কোনোমতে ধনঞ্জয়কে ধরে নৌকার পাটাতনে শুইয়ে দিল। তারপর নিজের মুখ শক্ত করে চেপে ধরে সে ব্যাগ থেকে ধনঞ্জয়ের জলের বোতলটা বের করল এবং পুরো জলটা ধনঞ্জয়ের মুখে ঢেলে দিল।

কয়েক মিনিট পর ধনঞ্জয়ের শরীরের খিঁচুনি থামল। সে যখন চোখ খুলল, তখন তার চোখে আবারও সেই পরিচিত ভয়। “কী হয়ে গিয়েছিল আমার, বাবু? মনে হলো যেন স্বপ্নে হাঁটছি আর কেউ আমাকে ডাকছে…”

রবি তখনও হাঁপাচ্ছে। “তুমি ফুলের মোহে চলে গিয়েছিলে। এই বনের ভিতরে ঢোকার মূল্য এটাই। তোমার মনকে আগে গ্রাস করবে, তারপর তোমার শরীরকে।”

ধনঞ্জয় চোখ মুছে উঠে বসল। সে জানে, এই গভীর জঙ্গলে আবেগ বা দুর্বলতার কোনো স্থান নেই। “ক্ষমা করবেন বাবু। এখন চলুন, সময় নষ্ট করা যাবে না। ওই ফুলটা যেখানে ফোটে, তার কাছেই থাকে ‘জলফাঁদ’।”

তারা আবার এগোতে শুরু করল। রবি এখন শুধু ঊর্মির শেষ কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করছে—“আলোটা মিথ্যে নয়… এর আত্মা আছে।” এই পথে হাঁটার মূল্য যে শুধু শরীরের ক্লান্তি নয়, বরং নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো, তা সে আজ বুঝতে পারল। ঊর্মি কি এই ‘দীর্ঘশ্বাসের ফুল’-এর গন্ধ শুঁকেছিল? সে কি জেনেশুনে নিজেকে এই বনের হাতে সঁপে দিয়েছিল?

রবি পকেটে থাকা ঊর্মির ডায়েরিটা একবার ছুঁয়ে দেখল। তাকে এই রহস্যের দরজা খুলতেই হবে। কারণ দরজাটা খুললেই সে জানতে পারবে, তার ভালোবাসা কীসের বিনিময়ে সুন্দরবনের গভীরে মিশে গেছে।

রহস্যময় দরজার সন্ধান

দ্বিতীয় দিন, সন্ধ্যা নামার মুখে। ‘দীর্ঘশ্বাসের ফুল’-এর গন্ধের ধাক্কা সামলে রবি আর ধনঞ্জয় যখন এগিয়ে চলল, ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে রক্তিম বিদায় জানাচ্ছে। ম্যানগ্রোভের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা শেষ আলোটুকুও যেন বিষাদের রঙে রাঙানো।

ধনঞ্জয় একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, “বাবু, সামনেই ‘জলফাঁদ’। এই জায়গাটা এমন যে জোয়ারের সময় জল ভরে থাকে, ভাটার সময়ও কাদা আর স্রোতের প্যাঁচে নৌকা আটকে যায়। আর এইখানে জলের তলায় এমন কিছু শক্ত, ধারালো শ্বাসমূল আর শ্যাওলা জমা আছে, যা দেখলে মনে হয় যেন বিরাট কোনো প্রাণীর কংকাল।”

সাবধানতার সঙ্গে তারা সেই জলফাঁদ পার হলো। ধনঞ্জয়ের অভিজ্ঞতা আর সতর্কতা তাদের রক্ষা করল। জলফাঁদ পার হওয়ার পরই তারা পৌঁছাল এক অন্যরকম স্থানে। সেটাকে খাঁড়ি বা নদী কিছুই বলা যায় না। চারদিকে ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা একটি শান্ত, প্রায় স্থির জলাশয়। জলের রঙ গভীর নীলচে-সবুজ। আর জলাশয়ের মাঝখানে, গাছের গুঁড়ির মতো দেখতে একটি বড়সড় পাথরের স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে।

sundarban rahashya 6

স্তম্ভটি দেখতে উল্কাপিণ্ডের মতো মসৃণ নয়, বরং অসংখ্য লতা আর শেওলা দিয়ে ঢাকা। কিন্তু তার গঠন কোনো মানুষের তৈরি স্থাপত্যের ইঙ্গিত দেয়। যেন এটি হাজার বছর ধরে এখানে একা দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের সমস্ত নীরবতা আর রহস্য শুষে নিচ্ছে।

“এটাই কি আলোর মন্দির?” রবি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।

ধনঞ্জয় মাথা নাড়াল। “না, বাবু। এটাই হলো সেই ‘দেও’দের খুঁটি। স্থানীয়রা বলে, এটা নাকি জলের গভীরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে রাখে। আর খুঁটিটার পাশেই আছে সেই রহস্যময় দরজা।”

রবি নৌকার পাটাতনে বসে ঊর্মির ডায়েরিটা আবার খুলল। ঊর্মি লিখেছিল: “আলোর আত্মা আছে। সে আত্মা জল আর মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এক গোপন কক্ষে বাস করে। সেখানের বাতাস খুব পুরনো, আর দেয়ালগুলোয় নাকি লেখা আছে পৃথিবীর জন্মের আগের কথা।”

কথাগুলো রবির মনে ঢেউ তুলল। ঊর্মি কোনোভাবেই এটা কাল্পনিকভাবে লেখেনি। সে নিশ্চয়ই এই জায়গাটা সম্পর্কে জানত।

তারা ডিঙিটা সাবধানে খুঁটির কাছে নিয়ে গেল। খুঁটিটার কাছাকাছি আসতেই রবি অনুভব করল—জলের উষ্ণতা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এবং বাতাসে ভেসে আসছে এক তীব্র লবণাক্ত উষ্ণ বাষ্পের গন্ধ

ধনঞ্জয় নৌকার লণ্ঠনটা জ্বালাল। আলো পড়তেই স্তম্ভটির গোড়ায় কিছু একটা দেখা গেল। লতা আর শ্যাওলার আড়ালে ঢাকা একটি কাঠামো—সেটা কোনো মন্দির নয়, কোনো প্রাকৃতিক গুহা নয়। সেটা আসলে একটি বিশাল পাথরের ফলক, যা জলাশয়ের তলায় প্রায় শুয়ে আছে। ফলকটির ঠিক মাঝখানে একটি গোল খাঁজ। যেন বিশাল একটি ঢাকনা, যা জলের তলার কোনো গোপন পথকে ঢেকে রেখেছে।

“বাবু, এটাই সেই দরজা,” ধনঞ্জয় ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলল। “কিন্তু এটা খুলবে কীভাবে?”

রবি স্তম্ভের কাছে গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। সেখানে হাতে খোদাই করা কিছু অদ্ভুত প্রতীক আঁকা। দেখতে অনেকটা প্রাচীন সুমেরীয় বা মায়া সভ্যতার লেখার মতো। আর সেই প্রতীকের নিচে, স্তম্ভের গায়ে একটি ছোট ফাঁকা গর্ত।

“ধনঞ্জয়,” রবি উত্তেজিত হয়ে বলল, “দরজাটা তো খোলার ব্যবস্থা আছে! আমার মনে হয়, এই গর্তটা কোনো চাবির জন্য তৈরি। হয়তো কোনো বিশেষ বস্তুকে এখানে ঢোকালে এই পাথরের ফলক সরে যাবে।”

কিন্তু কী সেই চাবি?

হঠাৎ রবির চোখ পড়ল তার গলার লকেটের দিকে। এক বছর ধরে সে এই লকেটটি পরে আছে। এটি ঊর্মির দেওয়া। দেখতে খুব সাধারণ, একটি গোল পাথরের লকেট, যার রঙ গভীর নীল।

রবি লকেটটি খুলে ফেলল। তারপর স্তম্ভের গর্তের সাথে মিলিয়ে দেখল। হুবহু মিলে গেল! কিন্তু লকেটটা কি শুধু একটা অলঙ্কার ছিল, নাকি এটা ছিল সেই রহস্যময় পথের চাবি?

“ধনঞ্জয়, এটা ঊর্মির লকেট। সে কি জানত যে এটাই সেই চাবি?”

ধনঞ্জয়ের চোখে অবিশ্বাস। সে বলল, “অবিশ্বাস্য! এই লকেটটা… এর মধ্যে তো কোনো মন্ত্র নেই! শুধু পাথর…”

রবি আর দেরি করল না। তার চোখে তখন ভালোবাসার তীব্র আকুতি। সে আস্তে করে সেই নীল পাথরের লকেটটি স্তম্ভের গর্তে স্থাপন করল।

সঙ্গে সঙ্গে এক শীতল নীরবতা নেমে এলো। জলের ওপরের বাতাস শান্ত হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড পরই স্তম্ভের মধ্য দিয়ে একটা মৃদু গুঞ্জন শব্দ হলো। জলের তলা থেকে উঠে আসতে লাগল অসংখ্য বুদবুদ।

তারপর, সেই বিশাল পাথরের ফলকটা যেন কোনো অদৃশ্য হাত ধরে ধীরে ধীরে জলের তলায় সশব্দে সরে যেতে শুরু করল! জলাশয়ের জল তোলপাড় হতে লাগল। উন্মুক্ত হলো এক গাঢ়, কালো, নিচের দিকে নামা পথ—যেন সুন্দরবনের হৃৎপিণ্ডের দিকে যাওয়ার এক সুড়ঙ্গ।

সেই পথে নেমে আসতে শুরু করল মৃদু, কিন্তু স্থির এক সবুজ আলো

রবি আর ধনঞ্জয় একে অপরের দিকে তাকাল। সেই সবুজ আলো… ‘আলোর মন্দির’-এর আলো। তারা ভুল পথে যায়নি, তারা সঠিক দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। আর সেই দরজা খুলেছে তাদের হারানো ভালোবাসার এক টুকরো স্মৃতি দিয়ে।

পাতাল পথের নীরবতা

দ্বিতীয় দিন, গভীর রাত। পাথরের ফলকটি সম্পূর্ণ সরে যাওয়ার পর, জলাশয়ের মাঝখানে উন্মোচিত হলো এক ঘোর কালো গহ্বর। সবুজ আলোটা সেই গভীরতা থেকে উঠে আসছে, যা তাদের কেবল পথ দেখাচ্ছে না, যেন এক রহস্যময় গন্তব্যের দিকে ডাকছে।

ধনঞ্জয় প্রথমে ইতস্তত করল। তার চোখে এখনও ভয়, কিন্তু রবির চোখের প্রতিজ্ঞা তাকে সাহস যোগালো। “বাবু, এটা তো মরণের পথ বলে মনে হচ্ছে। তবে আপনার বিশ্বাসে যখন এলামই, তখন আর পিছিয়ে যাব না।”

রবি নৌকার দড়ি খুঁটিতে বেঁধে লণ্ঠনটা হাতে নিল। “ভয় পেও না ধনঞ্জয়। ঊর্মি এই পথেই গিয়েছিল। এই পথ মরণের নয়, হয়তো জীবনের কোনো অন্য সত্যের দিকে নিয়ে যায়।”

তারা সাবধানে সেই জলের গহ্বরে নামল। প্রথমদিকে জল ছিল গলা পর্যন্ত, তারপর সিঁড়ির মতো পাথরের ধাপ শুরু হলো। ধাপগুলো অত্যন্ত প্রাচীন, কোথাও কোথাও শেওলায় পিচ্ছিল। তারা যখন নিচে নামছিল, তখন ওপর থেকে জলের মৃদু কলকল শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। সুন্দরবনের বাইরের জগত থেকে তারা যেন হাজার মাইল দূরে সরে এসেছে।

প্রায় কুড়িটি ধাপ নিচে নামার পর, তারা একটি সরু, শুকনো সুড়ঙ্গে প্রবেশ করল। সুড়ঙ্গের দু’পাশে প্রাচীন পাথরের দেয়াল, যা দেখে মনে হয়, এটি হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের তৈরি। কিন্তু সুন্দরবনের মতো একটি জলাভূমিতে এত নিচে, এত বড় স্থাপনা তৈরি করল কারা?

সুড়ঙ্গের ভেতর অদ্ভুত এক নীরবতা। কোনো পোকামাকড়ের শব্দ নেই, কোনো বাতাসের প্রবাহ নেই। এখানকার বাতাস ভারী, লোনা আর পুরনো গন্ধযুক্ত। রবির লণ্ঠনের আলোয় সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্ত দেখা গেল না, কিন্তু সবুজ আলোটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

তারা হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর, রবি দেখল দেয়ালে খোদাই করা কিছু আঁকাবাঁকা চিত্র। সেগুলো সেই রহস্যময় প্রতীকেরই পুনরাবৃত্তি, যা তারা বাইরের স্তম্ভে দেখেছিল। তবে এখানে আরও বেশি বিস্তারিত। মনে হচ্ছে কোনো অজানা সভ্যতার ইতিহাস বা ধর্মীয় বিশ্বাস এই দেয়ালগুলোতে খোদাই করা।

হঠাৎ ধনঞ্জয় থমকে দাঁড়াল। “বাবু! দেখুন!”

সামনের দিকে সুড়ঙ্গটা একটা বড় কক্ষের দিকে গিয়ে মিশেছে। আর সেই কক্ষের প্রবেশপথে, মাটির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পুরনো কিছু হাড্ডিসার দেহাবশেষ। সেগুলো মানুষের কঙ্কাল, তবে তাদের গঠন যেন স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা আর অস্বাভাবিক।

ধনঞ্জয় আতঙ্কে প্রায় জমে গেল। “এঁরা কারা? এরা কি সেই ‘দেও’দের শিকার?”

রবি সাবধানে কঙ্কালগুলো পরীক্ষা করল। তাদের পোশাক বা কোনো আধুনিক চিহ্ন নেই। মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো কোনো সময়ের। “এঁরা হয়তো আমাদের মতোই আলোর টানে এসেছিল, কিন্তু কোনো কারণে আর ফিরতে পারেনি।”

কক্ষটির ভেতরে প্রবেশের পর তাদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। কক্ষটি আসলে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ গম্বুজ, যার কেন্দ্রে ছিল সেই সবুজ আলোর উৎস

কিন্তু সেটা কোনো উল্কাপিণ্ড বা পাথর নয়। সেটা ছিল এক ধরণের জ্বলন্ত তরল পদার্থের জলাধার। জলাধারটি দেখতে প্রায় একটি ছোট পুলের মতো, আর তার ভেতরের তরলটি অবিরাম মৃদু ঢেউ তুলে সবুজ আলো বিকিরণ করে চলেছে। সেই আলো কক্ষের ভেতরের দেয়ালে থাকা হাজার হাজার রহস্যময় প্রতীককে আলোকিত করছে, যা এক গভীর আভা তৈরি করেছে।

আর এই জলাধারের ঠিক পাশেই, একটি পাথরের বেদি। বেদির ওপরে শুয়ে আছে… ঊর্মিমালা!

sundarban rahashya 7

রবি স্তব্ধ হয়ে গেল। তার হাত থেকে লণ্ঠন পড়ে গেল, কিন্তু সবুজ আলোর কারণে কক্ষটিতে অন্ধকার হলো না। ঊর্মি জীবিত। তার শরীর ধীরগতিতে ওঠানামা করছে, যেন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার মুখে নেই কোনো ক্লান্তির ছাপ, বরং আছে সেই চরম শান্তি, যা ধনঞ্জয় ‘দীর্ঘশ্বাসের ফুল’-এর প্রভাবে দেখেছিল।

রবি তীব্র আবেগ নিয়ে ঊর্মির কাছে ছুটে গেল। “ঊর্মি! ঊর্মি!”

সে ঊর্মির শরীর ছুঁল। শরীর উষ্ণ, কিন্তু হৃদস্পন্দন প্রায় নেই বললেই চলে। তার মনে হলো, যেন ঊর্মি এক ধরণের স্থবিরতা বা সমাধির মধ্যে আছে।

আর তখনই রবি লক্ষ্য করল—ঊর্মির হাতে ধরা একটি নতুন ডায়েরি, যেটা তার দেওয়া পুরোনো ডায়েরিটার পাশে রাখা ছিল। এবং জলাধার থেকে যে সবুজ আলো নির্গত হচ্ছে, তার একটি সুক্ষ্ম ধারা যেন ঊর্মির কপাল লক্ষ্য করে অবিরাম ছুটে যাচ্ছে।

“এটা কী হচ্ছে, ধনঞ্জয়?” রবির গলায় আকুলতা।

ধনঞ্জয় অবাক চোখে দেখল সেই দৃশ্য। “বাবু, এটা তো পূজার মতো লাগছে। আমার মনে হচ্ছে, ঊর্মিমা… তাকে এই আলোর শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে।”

রবি নতুন ডায়েরিটা খুলল। প্রথম পাতায় ঊর্মির হাতের কাঁপানো অক্ষরে লেখা শেষ লাইনটি:

“আমি এখানে এসেছি রবি। এ শুধু আলো নয়, এটা সুন্দরবনের স্মৃতি। এখানকার বাতাস হাজার বছরের জ্ঞান ধারণ করে। আমি এই স্মৃতিতে মিশে যেতে চাই… এই আলোর সঙ্গে মিশে যেতে চাই, যাতে আমি জগতের সব সত্য জানতে পারি। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো না, কিন্তু ভুলে যেও না। ভালোবাসার চেয়েও বড় সত্য আছে—আর সেই সত্যের জন্য আমি নিজেকে সমর্পণ করলাম। এই সমাধির পর আমি হয়তো আর রক্তমাংসের ঊর্মি থাকব না, কিন্তু আমি তোমার পাশে থাকব—আলো হয়ে।”

রবির চোখে জল আর অবিশ্বাস। ঊর্মি স্বেচ্ছায় নিজেকে উৎসর্গ করেছে? ভালোবাসার চেয়ে বড় সত্য!

ফেরার পথের প্রতিজ্ঞা

রবি তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল—তার ভালোবাসা ঊর্মিমালা স্বেচ্ছায় নিজেকে এই রহস্যময় সবুজ আলোর কাছে সমর্পণ করেছে। ভালোবাসার চেয়েও বড় এক সত্যের সন্ধানে সে বেছে নিয়েছে এক ভিন্ন জীবন। রবি ধীরে ধীরে ঊর্মির পাশে বসে পড়ল। তার হাত তখনও ঊর্মির কপাল থেকে আসা আলোর ধারায় স্নাত।

ধনঞ্জয় পেছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, “বাবু, আমার মনে হয় আমরা এখন এক আদিম শক্তিপীঠে দাঁড়িয়ে আছি। এখানকার মানুষ হয়তো এই আলোকে তাদের জীবনের বা জ্ঞানের উৎস মনে করত। এই আলোয় মিশে গেলে শরীর অমর না হলেও, আত্মা জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করে।”

রবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে ঊর্মির নতুন ডায়েরিটা হাতে নিল। তার পাতা ওল্টাতে লাগল। সেখানে ছবি আঁকা ছিল, সেই প্রতীকগুলোর ব্যাখ্যা ছিল, আর ছিল কিছু কবিতা, যা সুন্দরবনের দীর্ঘশ্বাস এবং পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে লেখা। ঊর্মি সেখানে লিখেছিল যে এই তরল পদার্থ আসলে প্রাচীন পৃথিবীর একটি বিরল খনিজ দ্রবণ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত তথ্য নিজের মধ্যে ধারণ করে। আর সে এই তথ্যের সঙ্গে মিশে যেতে চেয়েছিল।

ডায়েরির শেষ পাতায় রবির জন্য একটি বার্তা ছিল:

“আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি রবি। আমি এই জ্ঞানের অংশ হয়ে তোমার কাছে ফিরে যাব। এই জগতকে এখন কেবল তুমিই সেই সত্য জানাতে পারো। ভালোবাসার শক্তি হলো বিশ্বাস, আর সেই বিশ্বাসে তুমি আমাকে খুঁজতে এসেছ। এখন তোমার পালা—এই সত্যকে রক্ষা করো। যখন তুমি আলোর চাবিটা আবার স্তম্ভে রাখবে, তখন আমাদের পথ আলাদা হয়ে যাবে, কিন্তু আমাদের গন্তব্য একই থাকবে—সত্যের পথে।”

রবি বুঝতে পারল, ঊর্মিমালা এখন আর তার ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, সে এখন এক মহৎ সত্যের ধারক। তার আবেগ, তার দুঃখ, সবকিছু যেন এই আলোর সামনে সামান্য মনে হলো। সে ঊর্মির নিথর, শান্ত কপালে শেষবারের মতো একটি চুম্বন আঁকল। সেই চুম্বন ছিল প্রেমিকের, ছিল বন্ধুত্বের এবং ছিল এক অসীম শ্রদ্ধার।

“চলো ধনঞ্জয়,” রবি এক শীতল শান্ত কণ্ঠে বলল। “আমরা আর এখানে থাকব না। আমাদের কাজ শেষ।”

ধনঞ্জয় অবাক হলো। “আপনি কি ঊর্মিমালার শরীর নেবেন না?”

“না। ঊর্মিমালা এখন এই আলোর অংশ। তার আত্মা এই জ্ঞানকে রক্ষা করুক। আমরা তাকে অসম্মান করব না। আমাদের কাজ হলো এই সত্যকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এই স্থানকে বাইরের দুনিয়ার লোভী চোখ থেকে রক্ষা করা।”

তারা উঠে দাঁড়াল। রবি শেষবারের মতো সেই ভূগর্ভস্থ কক্ষটির দিকে তাকাল, যেখানে নীরব সবুজ আলোয় তার ভালোবাসা চিরতরে ঘুমিয়ে আছে।

ফিরে আসার পথে তারা আবার সেই পাতাল পথের নীরবতা পার হলো। যখন তারা স্তম্ভের কাছে পৌঁছাল, তখন বাইরে ভোরের আলো ফুটেছে। জোয়ারের জল ধীরে ধীরে জলাশয়ে ঢুকতে শুরু করেছে।

রবি লকেটটি স্তম্ভের গর্ত থেকে বের করে নিল। সঙ্গে সঙ্গে পাথরের ফলকটি শব্দ করে আবার তার জায়গায় ফিরে এলো, জলাশয়ের গোপন পথ বন্ধ হয়ে গেল। বাইরের জগৎ থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই, কিছুক্ষণ আগেও এখানে এক গভীর রহস্যের দরজা খোলা ছিল।

রবি স্তম্ভের কাছে গিয়ে ঊর্মির নীল পাথরের লকেটটি শক্ত করে ধরল। তার চোখ এখন আর কাঁপাচ্ছে না, বরং এক কঠিন প্রতিজ্ঞা সেখানে ফুটে উঠেছে।

“ধনঞ্জয়,” রবি বলল, “আমরা কাউকে এই আলোর কথা বলব না। ‘আলোর মন্দির’ লোককথা হয়েই থাকুক। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ, ফটো—সব আমি নিজের কাছে রাখব। শুধু ঊর্মির ডায়েরির সেই জ্ঞানটুকু আমি পৃথিবীর সঙ্গে ভাগ করে নেব, কবিতার মাধ্যমে, গল্পের মাধ্যমে—যাতে মানুষ প্রকৃতির প্রতি তার দায়িত্ব বুঝতে পারে।”

ধনঞ্জয় দীর্ঘদিনের ভয়ের বাঁধন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। “আমি আপনার সঙ্গে আছি, বাবু। সুন্দরবনের রহস্য চিরকাল রহস্যই থাকুক। এই সত্যের ভার আমরা দু’জন বহন করব।”

তাদের ডিঙি আবার ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূল পেরিয়ে লোকালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করল। রবির কাঁধে এখন শুধু তার ব্যাকপ্যাকের ভার নয়, বরং এক ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা এবং এক মহৎ জ্ঞানের বোঝা।

সে হয়তো তার প্রেমিকাকে ফিরে পায়নি, কিন্তু সে ফিরে পেয়েছে এক গভীর সত্যের অংশ, যা ঊর্মিমালা তাকে সঁপে দিয়ে গেছে। সুন্দরবনের নদীর স্রোতে তাদের নৌকা চলতে লাগল, আর রবি নিশ্চিত হলো—ঊর্মিমালা আলো হয়ে তার হৃদয়ে ফিরে এসেছে, এবং সেই আলো তাকে সত্য ও ভালোবাসার পথে চিরকাল পথ দেখাবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *