দহন: প্রেম, সন্দেহ আর ফিরে আসা|
Bangla Love Story | ঘৃণা, ভুল বোঝাবুঝি ও প্রেমের গল্প
শুরুর রাগ, সংঘর্ষ ও অভিমান
তিথি সদ্য এমবিএ পাস করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জয়েন করেছে। প্রথম থেকেই সে তার কাজ নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস। অন্যদিকে, অরণ্য ওই অফিসের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার। বছর পাঁচেক ধরে কাজ করছে, এবং কাজের প্রতি তার নিজস্ব নিয়ম, শৃঙ্খলা, ও গর্ব রয়েছে।
তিথি আর অরণ্যের প্রথম পরিচয় হয় একটি ক্লায়েন্ট মিটিং-এ। তিথি, নবীন হওয়া সত্ত্বেও সাহস করে অরণ্যের দেওয়া তথ্যের একটি ভুল ধরিয়ে দেয়। অরণ্য প্রথমে তা সহ্য করতে না পারলেও তিথির আত্মবিশ্বাসে একটা চাপা সম্মানবোধ জন্মায়। যদিও বাইরে সেটা প্রকাশ করে না।
এরপর প্রতিদিন অফিসে তাদের মধ্যে ঠান্ডা সংঘর্ষ লেগেই থাকে। মিটিং-এর মাঝখানে কটাক্ষ, রিপোর্টে একে অপরের কাজের খুঁত ধরা — এগুলো যেন তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে ওঠে। অফিসজুড়ে সবাই জানত, তিথি আর অরণ্য একে অপরকে একেবারেই পছন্দ করে না।
বাধ্যতামূলক নিকটতা
সবকিছু বদলে যায় যখন কোম্পানি একটি বড় প্রজেক্টে অরণ্যকে টিম লিড করে আর তিথিকে তার অধীনে কাজ করতে দেয়। দুজনকেই একসাথে পরিকল্পনা করতে হয়, কাজ ভাগ করে নিতে হয়, লেট-নাইট মিটিং করতে হয়।
শুরুর দিকে তারা দুজনেই চেষ্টা করত একে অপরের কাজ খারিজ করতে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়, তিথির প্রেজেন্টেশন দক্ষতা অরণ্যর পরিকল্পনার সাথে দারুণভাবে মেলে যায়। তারা একে অপরের কাজের গুণ বুঝতে শুরু করে। ধীরে ধীরে শুরু হয় এক অজানা প্রেমের গল্প।
এক সন্ধ্যায়, অফিস শেষে কাজ শেষ করে অরণ্য চুপচাপ বলে ফেলে,
“তোমার স্পষ্টভাবে কথা বলা জিনিসটা অনেকের খারাপ লাগলেও, আমি সেটা শ্রদ্ধা করি।”
তিথি চমকে যায়। তারপর হাসে।শুরু হয় প্রেমের গল্প, এই প্রথম সে অরণ্যের মুখে এমন কিছু শুনল। সেদিনের পর তাদের কথাবার্তায় রূঢ়তা কমে আসে। রাতের খাবারের জন্য একসাথে ক্যাফেতে যাওয়া, কাজের বাইরে একটু হাসি-মজা—এগুলো এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
প্রেমের প্রথম ইঙ্গিত
অরণ্য তিথির মধ্যে এমন কিছু দেখতে পায় যা আগে চোখে পড়েনি—সে যতটা কঠিন, তার মধ্যে ততটাই কোমল একটা মন লুকিয়ে আছে।ধীরে ধীরে শুরু হয় এক অজানা প্রেমের গল্প। তিথি একদিন বলেও ফেলে,
“তুমি যতটা রাগী দেখাও, ঠিক ততটাই নরম মন আছে তোমার ভিতরে, অরণ্য।”
অরণ্য হেসে ফেলে, বলে, “তুমি জানো, একমাত্র তুমিই এসব বলতে পারো আমার মুখের সামনে।”
এতদিনের সেই দ্বন্দ্ব কোথায় যেন মিলিয়ে যেতে থাকে। শুরু হয় প্রেমের গল্প
অফিসের বাইরে তাদের দেখা হওয়া শুরু হয় – মুভি, কফিশপ, বইয়ের দোকান… কোনো লেবেল ছিল না সম্পর্কের, কিন্তু তিথি জানতো – কিছু একটা গড়ে উঠছে।
তবে এই ভালোবাসার মোড় ঘুরে যায় এক অচিন্ত্য পরিস্থিতিতে…
প্রাক্তনের ছায়া ও সন্দেহ
একদিন তিথি হঠাৎ দেখে, অরণ্য একটি কফিশপে এক মহিলার সঙ্গে বসে আছে। তাদের চোখে-মুখে এক চেনা পরিচয়। সে কিছু বলে না, কিন্তু তার মন কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে।
পরে অফিসে জানতে পারে – সেই মহিলা অরণ্যের প্রাক্তন প্রেমিকা, মায়া। মায়া এখন একজন কর্পোরেট কনসালট্যান্ট, কিছুদিনের জন্য একই কোম্পানিতে আসছে ক্লায়েন্ট হিসেবে।
তিথি কিছু না বললেও অরণ্যের ব্যবহার ধীরে ধীরে বদলে যায়। ফোনে কম কথা, দেখা হলেও অন্য দিকে মন—তিথির সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। প্রেমের গল্প যেন মলিন হয়ে যায়।
একদিন তিথি সোজা জিজ্ঞেস করে,
“তোমার আর মায়ার মধ্যে কি আবার কিছু শুরু হচ্ছে?”
অরণ্য চমকে ওঠে, “তুমি এসব ভাবছো কেন?”
“তাহলে তুমি লুকিয়ে মিটিং করছো কেন? আমায় বললে না কেন?”
অরণ্য চুপ থাকে।
সেই চুপ থাকা যেন তিথির সন্দেহকে দৃঢ় করে দেয়। সম্পর্কটা এবার ভাঙনের দিকে এগিয়ে যায়।
দূরত্ব, বিচ্ছেদ ও নিরবতা
তিথি যেন হঠাৎ এক মেঘলা বিকেলের মতো নিঃশব্দে অরণ্যের জীবন থেকে সরে যেতে শুরু করে।
প্রথমে কম কথা, তারপর চুপচাপ থাকা, এবং শেষে—একেবারে অচেনা হয়ে যাওয়া।
অফিসে অরণ্যের সামনে পড়লেও, চোখ যেন তাঁকে খুঁজে পায় না। কথা তো দূরের কথা, তাঁর ছায়ার সঙ্গেও আর কোনো যোগ নেই।
অরণ্য বোঝে, সবকিছুর পিছনে তিথির আস্থার ভাঙন।
সে বারবার বলে—
“মায়া আমার জীবনে অতীত। ও এখন কেবল একজন ক্লায়েন্ট। ওর ফিরে আসা আমার জীবনে কোনো অর্থ রাখে না।”
কিন্তু তিথি তখন ভেঙে গেছে—হৃদয়ের গোপন কোণ থেকে।
ভালোবাসা যখন আঘাত করে, তখন তা নিঃশব্দেই রক্তক্ষরণ ঘটায়—আর সে রক্তক্ষরণ কেউ দেখে না।
একদিন, নিঃশব্দেই তিথি ছুটির দরখাস্ত জমা দেয়।
অরণ্য জানতেও পারে না—এটাই তাঁদের দেখা হওয়ার শেষ দিন হতে চলেছে।
ফোন করে, মেসেজ পাঠিয়ে, অরণ্য ব্যাকুল হয়ে তিথিকে খুঁজে বেড়ায়,
কিন্তু ফোন সুইচড অফ,
মেসেঞ্জারে ‘Seen’ নেই,
কোনো উত্তর নেই—শুধু একটা নিঃসঙ্গ শূন্যতা।
দিন যায়। অরণ্য নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে,
“তিথি কি একটুও জানে না, আমি কেমন আছি?
আমি কেমন করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি ওকে না দেখে?”
সব কিছুর মাঝে অরণ্য উপলব্ধি করে,
মায়ার সঙ্গে অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল, কিন্তু
তিথির সঙ্গে ছিল নিঃশর্ত ভালোবাসা।
সে বুঝতে পারে,
তিথিই তাঁর জীবনের শুদ্ধতম অনুভব,
যার অভাবে তাঁর সকালগুলো অসম্পূর্ণ,
রাতগুলো কেবল দীর্ঘশ্বাসের।
একটা ঘরভরা মানুষের মধ্যেও অরণ্য তখন নিঃসঙ্গ—
কারণ তিথি নেই।
ওর চোখে নেই সেই উষ্ণতা,
ওর হাসিতে নেই সেই প্রশ্রয়।
“ভালোবাসা কি সত্যিই শেষ হয়ে যায়?
নাকি আমরা বোঝার আগেই তা নীরব হয়ে যায়?”
তিথির না-থাকাটাই তখন অরণ্যের জীবনের সবচেয়ে বড় উপস্থিতি।
ফিরে আসা, চিঠি ও শেষ মিলন
দুই সপ্তাহ পর তিথি অফিসে ফিরে আসে। মুখে একরাশ অবজ্ঞা, মনটা কঠিন হয়ে গেছে।
অরণ্য বুঝতে পারে মুখোমুখি কিছু বললে তিথি শুনবে না। তাই সে এক চিঠি লেখে, হাতের লেখা, মন থেকে লেখা:
“তিথি,
আমি জানি, আমার চুপ থাকা তোমার বিশ্বাস ভেঙেছে।
কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি কেবল তোমাকেই ভালোবেসেছি।
মায়া আমার অতীত, তুমি আমার বর্তমান… আমার ভবিষ্যৎ।
যদি আর একবার আমার দিকে তাকাও, আমি বুঝবো তুমি আমায় ক্ষমা করেছো।”
“তিথি,
আমি জানি, আমার চুপ থাকা তোমার বিশ্বাস ভেঙেছে।
কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি কেবল তোমাকেই ভালোবেসেছি।
মায়া আমার অতীত, তুমি আমার বর্তমান… আমার ভবিষ্যৎ।
যদি আর একবার আমার দিকে তাকাও, আমি বুঝবো তুমি আমায় ক্ষমা করেছো।”
তিথি ডেস্কে সেই চিঠি পড়ে, ধীরে পেছনে ফিরে তাকায়। অরণ্য দাঁড়িয়ে থাকে দরজার পাশে। চোখে জল, কিন্তু মুখে এক স্বস্তির প্রশান্তি।
তিথি ধীরে এগিয়ে আসে… আর অরণ্যর বুকের মধ্যে মাথা রেখে বলে,
“এতটা জেদ, এতটা ভুল বোঝাবুঝি – সব কিছু সার্থক, যদি শেষটা তুমি হও।”
“দহন” কেবল একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি সম্পর্কের সমস্ত জটিলতা, ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান, প্রাক্তন প্রেমের ছায়া এবং সন্দেহকে অতিক্রম করে ভালোবাসার জয় ঘোষণার গল্প।
👉 এই গল্পটি তাদের জন্য যারা সত্যিকারের ভালোবাসা পেতে চান, কিন্তু ভয় পান সম্পর্কের টানাপোড়েনকে।
প্রিয় পাঠক,
জীবনে কখনো কখনো সম্পর্কগুলো জটিল হয়ে ওঠে—ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান, আর অতীতের ছায়া যেন বর্তমানকে ঢেকে ফেলে।
“দহন” গল্পটি ঠিক সেইসব মুহূর্তের কথা বলে,
যেখানে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, আবার ভালোবাসাই তাকে নতুন করে গড়ে তোলে।
এই গল্পটি কেবল কল্পনার নয়—এটি আমাদের প্রতিটি ভালোবাসার বাস্তব প্রতিফলন।
আপনার জীবনের কোনো অনুভব যদি এই গল্পের সুরে মিলে যায়,
তবে বুঝে নেবেন—আপনি একা নন।
👉 আমরা সবাই ভালোবাসি,
কখনো ভয় পাই, কখনো কাঁদি, কখনো ফিরে যাই,
আর সবশেষে—ভালোবাসাকেই জিতিয়ে দিই।
আপনার ভালোবাসা কেমন?
কমেন্টে লিখে জানান, এবং যদি গল্পটি আপনার মন ছুঁয়ে যায়,
তাহলে শেয়ার করে দিন আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে।
ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা সহ,
– “গল্প কথা”র পরিবার