অতিথির রাত
|

“অতিথির রাত”

অচেনা অতিথির আগমন

বর্ষার এক সন্ধ্যা। আকাশজুড়ে কালো মেঘ, মাঝেমাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি আর গর্জন। গ্রাম কুড়িপাড়া তখন প্রায় অন্ধকারে ডুবে গেছে। ধানের মাঠগুলো বৃষ্টির জলে ভেসে উঠেছে, কাঁচা পথ কাদায় পিচ্ছিল, চারপাশে শুধু ব্যাঙের ডাক আর বাঁশঝাড়ের মধ্যে শিস দেওয়া বাতাসের শব্দ।

এমন সময় গ্রামের বাইরের মাটির রাস্তায় দেখা গেল এক অচেনা মানুষকে। গায়ের গামছাটা ভিজে একেবারে গা ঘেঁষে আছে, মাথায় ঝড়-বৃষ্টির ভিজে টুপি, হাতে একটা পুরোনো থলে। মানুষটা ধীরে ধীরে হাঁটছিল, কিন্তু তার চোখদুটো যেন অস্বাভাবিকভাবে জ্বলজ্বল করছে।

গ্রামের প্রবেশমুখে কয়েকজন ছেলে কাদায় খেলছিল। তারা হঠাৎ লোকটিকে দেখে আঁতকে উঠল। এক ছেলে দৌড়ে গিয়ে চিৎকার করে ডাকল—

“ওরে! একজন অচেনা লোক এসেছে, গ্রামের ভেতরে ঢুকছে!”

কিছুক্ষণ পর গ্রামের মুরুব্বি কুশলবাবু আর কয়েকজন লোক ছুটে এলেন। তাঁরা বৃষ্টিভেজা পথের মাঝে দাঁড়িয়ে লোকটিকে থামালেন।

—“কে আপনি? কোথা থেকে আসছেন?” কুশলবাবু প্রশ্ন করলেন।

লোকটা ভেজা গলায় উত্তর দিল,
—“আমি সুবল মল্লিক। পথ ভুল করে এই গ্রামে চলে এসেছি। ঝড়-বৃষ্টিতে হাঁটতে পারছিলাম না। একটু আশ্রয় চাই…।”

তার গলার স্বর করুণ, কিন্তু অদ্ভুত ভারী। শুনে মনে হয় যেন ভিতর থেকে অন্য কেউ কথা বলছে।

কেউ কেউ করুণায় নরম হয়ে গেল। কিন্তু পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধা খুকিমা ফিসফিস করে বললেন—
—“ওর চোখের চাহনি কেমন অদ্ভুত লাগছে গো… যেন শেয়ালের মতো।”

কুশলবাবু দ্বিধায় পড়লেন। বৃষ্টি ক্রমেই বাড়ছে, বিদ্যুতের ঝলকানি ছড়িয়ে পড়ছে চারদিক। শেষমেশ তিনি দয়া করে বললেন—
—“আচ্ছা, চলুন, আপনাকে স্কুলঘরে রাখা হবে। সেখানে ছাদ আছে, রাতটা কেটে যাবে।”

লোকটা মাথা নিচু করে শুধু একবার হেসে বলল—
—“ধন্যবাদ…।”

কিন্তু তার হাসিটা অদ্ভুত—শুনলে বুকের ভেতর কেমন ঠাণ্ডা শিহরণ জাগে।

অস্বাভাবিক আচরণ

সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলঘরটা অচেনা অতিথি সুবল মল্লিককে আশ্রয় দিল। বাইরে ঝড়-বৃষ্টি থামলেও আকাশে কালো মেঘ জমে ছিল, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের তীব্র আলোয় গ্রামের তালগাছগুলো অদ্ভুতভাবে কেঁপে উঠছিল।

প্রথম দিকে সুবল চুপচাপ বসে ছিল। গায়ের কাপড় শুকোতে শুকোতে হালকা গলায় গ্রামের লোকজনকে বলেছিল—
—“আপনাদের দয়া না হলে আজ আমি হয়তো রাস্তায় প্রাণ দিতাম।”

কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আচরণ বদলাতে শুরু করল।

অদ্ভুত শব্দ

রাত তখন প্রায় দশটা। স্কুলঘরের জানালা বাইরে থেকে বন্ধ করে সবাই নিজেদের ঘরে ফিরে গেছে। কেবল পাশের বাড়িতে থাকা শিক্ষক মণীশ মাস্টার সতর্ক চোখে নজর রাখছিলেন। হঠাৎ তিনি টের পেলেন—ভেতর থেকে ভেসে আসছে অচেনা শব্দ।

মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে—শিশুর কান্না, আবার কখনও করুণ হাহাকার। যেন অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে ফিসফিস করে ডাকছে।

মণীশ ভয়ে গা শিউরে উঠলেও সাহস করে এগোলেন।

লাল আলো

জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই তার বুক হিম হয়ে গেল। সুবল মেঝেতে বসে আছে, হাতে ছোট্ট ছুরি, আর মেঝেতে নিজের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে অচেনা চিহ্ন আঁকছে। সেই রক্ত থেকে লালচে আলো বেরোচ্ছে, যেন অন্ধকারে আগুনের শিখা।

তার চোখ তখন জ্বলছে জ্বলন্ত কয়লার মতো। ঠোঁটে অদ্ভুত ভাষার মন্ত্র—যা মানুষের নয়।

atithir rat 1

মণীশের কানে স্পষ্ট শোনা গেল—
—“দরজা খোলো… আমি ফিরে এসেছি… তোমাদের সবার জন্য…”

ভয়ঙ্কর চাহনি

হঠাৎ সুবল থেমে জানালার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টি সরাসরি গিয়ে পড়ল মণীশের চোখে। সেই দৃষ্টি এত তীক্ষ্ণ, এত অস্বাভাবিক, যে মণীশ মনে করলেন কেউ যেন তার বুকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ধরে আছে।

ভয়ে তার হাঁটু কাঁপতে লাগল। তিনি কোনোমতে চিৎকার করে উঠলেন—
—“বাঁচাও!”

চিৎকার শুনে গ্রামবাসী দৌড়ে এল। কিন্তু দরজা খুলতেই দেখা গেল—ভেতরে সুবল শান্তভাবে বসে আছে, যেন কিছুই হয়নি। মেঝেতে রক্তের দাগ কোথাও নেই।

লোকজন হতবাক। মণীশ কাঁপা গলায় বললেন—
—“আমি নিজ চোখে দেখেছি… ও মানুষ নয়!”

কিন্তু সুবল তখন শুধু হেসে উঠল। সেই হাসি শুনে গ্রামের বাচ্চারা ভয় পেয়ে কেঁদে উঠল, আর খুকিমা আঁচল দিয়ে মুখ চেপে বললেন—
—“ওর ভেতরে অশরীরীর বাস আছে…।”

গ্রামে ভয়ের ছায়া

পরের দিন সূর্য ওঠার আগেই গোটা কুড়িপাড়া গ্রামে অদ্ভুত পরিবেশ নেমে এলো। সাধারণত ভোর হলে মোরগ ডাকে, গরুগুলো গোয়ালঘর থেকে বেরোয়, ধানের খেতের উপর শিশির ঝকমক করে ওঠে। কিন্তু সেদিন সবকিছুই যেন অস্বাভাবিক।

অদ্ভুত নিস্তব্ধতা

গ্রামের মানুষ টের পেল—আকাশে কোনো পাখি উড়ছে না, বাঁশঝাড়ে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ নেই, এমনকি কুকুরগুলোও অকারণে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠছে। বাতাসে কেমন একটা ভারী গন্ধ, যেন পুরোনো পোড়া কাঠ আর শবদাহের ধোঁয়া।

দেয়ালে রক্তের দাগ

যখন কয়েকজন লোক স্কুলঘরের ভেতরে ঢুকল, তারা আঁতকে উঠল। রাতভর যে ঘরটিতে সুবল ছিল, তার দেয়ালে বড় বড় লালচে দাগ লেগে আছে। দাগগুলো এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যেন কেউ হাতের তালু চেপে রেখে টেনে নিয়ে গেছে।

কেউ সাহস করে আঙুল দিয়ে ছুঁতেই দেখল—ওটা আসলেই শুকনো রক্ত!

ভয়ে সবার বুক কেঁপে উঠল।

অশুভ পূর্বাভাস

সেই সময় সুবল ঘর থেকে বেরোল। তার চেহারা রাতের তুলনায় অনেকটা ক্লান্ত, কিন্তু ঠোঁটে শীতল হাসি।

সে নিচু গলায় বলল—
—“ভয় পেও না, এটা কেবল শুরু। রাত নামলেই তোমরা আসল খেলাটা দেখবে।”

এই কথা শুনে গ্রামের বাচ্চারা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। মহিলারা আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকল। কুশলবাবু কেঁপে কেঁপে বললেন—
—“তুমি আসলে কে? আমাদের গ্রামে এসেছ কেন?”

সুবল তার জ্বলজ্বলে চোখ তুলে তাকাল। ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিল—
—“আমি ফিরে এসেছি আমার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে… এই গ্রাম থেকে কেউ পালাতে পারবে না।”

গ্রামে আতঙ্কের ছড়াছড়ি

সেদিন দুপুরেই গোটা গ্রামে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ল। কেউ কাজ করতে মাঠে গেল না। সবাই ঘরে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে রইল।

হঠাৎ সন্ধ্যার আগেই পুকুরের জলে ফেনা উঠল, মাছগুলো মরতে মরতে ভেসে উঠল। গ্রামের মসজিদ ও মন্দিরে একসঙ্গে প্রদীপ নিভে গেল।

আর বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে শোনা গেল নারীদের কণ্ঠস্বর—“আমাদের মুক্তি দাও… আমাদের মুক্তি দাও…”

atithir rat 2

গ্রামবাসীরা বুঝে গেল—কোনো সাধারণ মানুষ নয়, ভয়ানক কিছু তাদের গ্রামে প্রবেশ করেছে।

খুকিমা চোখে জল নিয়ে কণ্ঠরুদ্ধ গলায় বললেন—
—“এই অতিথি আমাদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। ওর ভেতরে অশান্ত আত্মারা আছে…।”

পুরোনো রহস্য ফাঁস

গ্রামের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল। কারও ঘুম নেই, কারও মুখে ভাত তুলতে ইচ্ছে করছে না। সবাই ভাবছে—এই অচেনা অতিথি আসলে কে?

হরনাথ ঠাকুরের কথা

সন্ধ্যায় গ্রামের বটগাছতলায় সবাই জড়ো হলো। সেখানে এলেন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি, পণ্ডিত হরনাথ ঠাকুর। সাদা ধুতি, লম্বা দাড়ি, চোখে মোটা চশমা। তিনি ধীরে ধীরে কথা শুরু করলেন—

—“তোরা যা দেখছিস, তা আজকের নয়। কুড়িপাড়ার ইতিহাসে এই ভয় বহু আগেই লেখা আছে।”

গ্রামবাসীরা হাঁ করে তাকাল।

হরনাথ কণ্ঠ নামিয়ে বললেন—
—“প্রায় একশো বছর আগে, এই গ্রামে এক তান্ত্রিক বাস করত। নামও ছিল—সুবল মল্লিক। তার সাধনা ছিল অশুভ, কালো জাদু। সে গ্রামবাসীদের প্রাণ নিয়ে তন্ত্র করত। অনেক শিশু, অনেক নারী রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যেত। সকালের আলোয় শুধু তাদের পোড়া দেহ মিলত শ্মশানের ধারে।”

গ্রাম জুড়ে সিসকার ওঠল। কেউ কেউ আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকল, কেউ চোখ নামিয়ে ফেলল।

অভিশপ্ত অতিথি

হরনাথ আরও বললেন—
—“অবশেষে গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে তাকে মেরে ফেলেছিল। নদীর চরে তার দেহ ফেলে দিয়েছিল, যাতে আর কখনও সে ফিরতে না পারে। কিন্তু মৃত্যুর আগে সে হেসে বলেছিল—

‘আমি আবার ফিরব, অতিথির ছদ্মবেশে। তখন এই গ্রাম রক্ষা করতে পারবে না কেউ।’”

কথাটা শুনে উপস্থিত সবার শরীর কাঁপতে লাগল।

সত্য উন্মোচন

মণীশ মাস্টার কেঁপে কেঁপে বললেন—
—“তাহলে… এই সুবল… ওই তান্ত্রিকেরই আত্মা?”

হরনাথ মাথা নাড়লেন—
—“হ্যাঁ। এ মানুষ নয়। অশান্ত আত্মারা তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফিরে এসেছে। সে গ্রামে আতঙ্ক ছড়াবে, রক্ত চাইবে। এই অতিথিই হলো আমাদের অভিশাপ।”

নতুন আতঙ্ক

হঠাৎ পাশের বাঁশঝাড় থেকে ভেসে এল এক চিৎকার—
“আমরা ফিরে এসেছি… মুক্তি চাই… রক্ত চাই…!”

atithir rat 3

গ্রামবাসীরা ছুটোছুটি করে পালাতে লাগল। হরনাথ ঠাকুর আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বললেন—
—“সময় খুব কম আছে। এই অতিথিকে থামানো না গেলে গোটা কুড়িপাড়া শেষ হয়ে যাবে।”

শেষ রাতের ভৌতিক খেলা

রাত নামতেই কুড়িপাড়া গ্রামকে ঘিরে ধরল এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। চারপাশে ঝিঁঝিঁর ডাক নেই, কুকুরের ঘেউ ঘেউ নেই, এমনকি বাতাসও যেন থেমে গেছে।

গ্রামের মানুষ ঘরে দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছে। কেউ মন্ত্র জপছে, কেউ প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করছে। তবু সবার বুকের ভিতর কেমন একটা ঠাণ্ডা ভয় জমে আছে।

অশুভ সূচনা

মধ্যরাত পেরোতেই স্কুলঘর থেকে ভেসে এল অদ্ভুত শব্দ—ঢাকের মতো বাজনা, সঙ্গে বিকট হাসি।

লোকেরা উঁকি দিয়ে দেখল—সুবল মল্লিক আর মানুষ নেই। তার শরীর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে, চোখে আগুনের শিখা। তার চারপাশে লালচে আলোয় অনেকগুলো ছায়া ঘুরছে। সেই ছায়াগুলো হলো—হারিয়ে যাওয়া মানুষদের আত্মা, যারা শতবর্ষ আগে বলি হয়েছিল।

তারা একসঙ্গে হাহাকার করছে—
“আমরা মুক্তি চাই! রক্ত চাই!”

প্রকৃতির বিদ্রোহ

হঠাৎ পুকুরের জল ফেনিয়ে উঠল, মাছগুলো লাফাতে লাফাতে মরতে লাগল। বাঁশঝাড় একসঙ্গে কেঁপে উঠল, যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। গ্রামজুড়ে শিশুর কান্নার মতো শব্দ ভেসে আসতে লাগল।

আকাশে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠল, কিন্তু আশ্চর্য—কোনো বজ্রপাত হলো না। আলোয় দেখা গেল, স্কুলঘরের ছাদে দাঁড়িয়ে সুবল মন্ত্র পড়ছে, আর তার গলা যেন অনেকগুলো মানুষের গলা মিশে তৈরি হয়েছে।

লড়াইয়ের মুহূর্ত

এই ভয়াল দৃশ্য দেখে সবাই পালাতে চাইছিল। কিন্তু হরনাথ ঠাকুর সাহস করে এগিয়ে এলেন। তাঁর হাতে পুরোনো শাস্ত্র আর পবিত্র মন্ত্রলিখিত তাবিজ। সঙ্গে দাঁড়ালেন মণীশ মাস্টার আর বৃদ্ধা খুকিমা।

হরনাথ কাঁপা গলায় মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন। শাস্ত্রের শব্দ বাতাসে ছড়িয়ে যেতেই ছায়াগুলো যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগল।

সুবল গর্জে উঠল—
—“আমায় কেউ থামাতে পারবে না! আমি অতিথি হয়ে আবার আসব… তোমাদের রক্তে ভিজব!”

সে ঝাঁপিয়ে পড়ল হরনাথের দিকে। ঠিক সেই মুহূর্তে মণীশ সাহস করে তাবিজ ছুঁড়ে মারলেন তার বুকে।

ভৌতিক সমাপ্তি

তাবিজ পড়তেই সুবলের শরীর কেঁপে উঠল, তার চারপাশের ছায়াগুলো আগুনে পুড়তে লাগল। ভয়ঙ্কর চিৎকারে গোটা গ্রাম কেঁপে উঠল।

ধীরে ধীরে কালো ধোঁয়া মিলিয়ে গেল, আর সুবলের দেহ মাটিতে ভেঙে পড়ল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেটা মাটিতে গলে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

গ্রাম আবার নীরব হলো। পুকুরের জল শান্ত, বাতাস থেমে গেল, কেবল দূরে শিয়ালের ডাক শোনা গেল।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে সবাই শুনতে পেল সেই ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বর—
“আমি আবার আসব… অতিথি হয়ে… তোমাদের কেউ বাঁচতে পারবে না।”

অশান্ত অতিথির ছায়া

সেই রাতের পর থেকে কুড়িপাড়া গ্রাম আর আগের মতো নেই।

গ্রামের মানুষ ভোরবেলা স্কুলঘরের কাছে যেতে সাহস করে না। তারা বলে—ভেতরে এখনও পোড়া গন্ধ ভেসে আসে, আর মাঝেমধ্যে দরজার ফাঁক দিয়ে লাল আলো জ্বলে ওঠে।

গ্রামের পরিবর্তন

  • সন্ধ্যা নামলেই গ্রাম যেন অচেনা হয়ে যায়।
  • মানুষ দরজা বন্ধ করে প্রদীপ জ্বালায়, যেন আলোই তাদের একমাত্র রক্ষা।
  • পুকুরপাড়ের কচুরিপানার ভেতর মাঝেমধ্যে কারও কান্না ভেসে আসে, কিন্তু গেলে দেখা যায়—কেউ নেই।

অশুভ স্মৃতি

বৃদ্ধা খুকিমা প্রায়ই বলেন—
—“ও চলে গেছে বটে, কিন্তু পুরোপুরি নয়। অতিথি হয়ে আবার ফিরবেই।”

মণীশ মাস্টারের চোখে এখনও আতঙ্ক। তিনি রাতের অদ্ভুত দৃশ্য ভোলা তো দূরের কথা, ঘুমের মধ্যেও চমকে উঠে ঘামতে থাকেন।

হরনাথ ঠাকুর গ্রামের মানুষকে বোঝান—
—“ওকে একবার ঠেকানো গেছে, কিন্তু সাবধান থাকতে হবে। আতিথেয়তা করতে গিয়ে আবার সর্বনাশ ডেকে আনিস না।”

আজও শোনা যায়…

কথিত আছে, ঝড়-বৃষ্টির রাতে কুড়িপাড়ার বাইরের রাস্তায় এখনও অচেনা অতিথি দাঁড়িয়ে থাকে। তার হাতে পুরোনো থলে, শরীরে ভেজা আলখাল্লা। দূর থেকে তাকে সাধারণ পথিক মনে হয়।

কিন্তু কেউ যদি সাহস করে চোখে চোখ রাখে, তবে বুকের ভেতর শীতল ভয় জমে যায়।

গ্রামের প্রবীণরা তাই বলেন—
“অচেনা অতিথিকে সহজে ঘরে তোল না। কে জানে, ও-ই হয়তো সেই অভিশপ্ত সুবল মল্লিক!”

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *