শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী

শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী

“অশুভের ছায়া ভেদ করে দেবীয় আলোয় উদিত হলেন শ্রীকৃষ্ণ।”

মথুরার অশান্তি – কংসের অত্যাচার ও ভবিষ্যদ্বাণীর ভয়

মথুরা—যমুনার তীরে অবস্থিত এক সমৃদ্ধ নগরী। প্রাচীনকাল থেকেই এই নগরী ছিল যাদব বংশের গৌরবের প্রতীক। সোনার প্রাসাদ, উঁচু প্রাচীর, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আর বাজারের কোলাহল—সব মিলিয়ে এক প্রাণচঞ্চল শহর। কিন্তু এই নগরীর সুখ-সমৃদ্ধি একদিনে ম্লান হয়ে গেল যখন সিংহাসনে বসলেন রাজা কংস।

কংস ছিলেন অদম্য শক্তির অধিকারী। যুদ্ধে তিনি অপরাজেয়, কিন্তু তাঁর হৃদয় ছিল নিষ্ঠুর ও ক্ষমতালোভী। সিংহাসনে বসার পর তিনি দ্রুত মথুরার শাসন নিজের হাতে দৃঢ় করে নিলেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তিনি নিজের প্রিয় আত্মীয়-স্বজনকেও রেহাই দেননি।

একদিন, মথুরা নগরী সাজানো হয়েছে বিশেষভাবে—রাজকন্যা দেবকীর বিয়ে বসুদেবের সাথে। দেবকী ছিলেন কংসের সহোদরা, আর বসুদেব ছিলেন যাদব বংশের এক বীর ও ধর্মপরায়ণ রাজপুত্র। বিবাহোৎসবের আনন্দে ভরে উঠেছিল শহর। রথযাত্রায় দেবকীকে নিজ হাতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কংস। বোনের প্রতি তাঁর স্নেহ ছিল, কিন্তু ভাগ্যের চাকা অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করল।

যখন রথ এগিয়ে চলেছে, তখন আকাশে বজ্রপাতের মতো একটি ভবিষ্যদ্বাণীর শব্দ ধ্বনিত হলো—
“কংস! তোমার প্রিয় বোন দেবকীর অষ্টম সন্তানই হবে তোমার মৃত্যুর কারণ।”

এই ভবিষ্যদ্বাণী শোনামাত্র কংসের মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। রথ থামিয়ে তিনি তলোয়ার বের করলেন, আর মুহূর্তেই দেবকীর প্রাণ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। বসুদেব ভয়ে কাঁপলেও দৃঢ় কণ্ঠে কংসকে বোঝালেন—

“হে রাজা, তুমি নির্দোষ বোনের প্রাণ নিতে চাও কেন? আমরা তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—যে সন্তান জন্ম নেবে, আমরা তাকে তোমার হাতে তুলে দেব।”

কংস কিছুক্ষণ ভাবলেন। মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন হলেও তিনি দেবকীর প্রাণ রক্ষা করলেন, কিন্তু সাথে সাথেই নবদম্পতিকে বন্দি করার নির্দেশ দিলেন। রাজপ্রাসাদের গভীর কারাগারে বন্দি করে দিলেন তাঁদের, যাতে অষ্টম সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই সবকিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকে।

দিন গড়াতে লাগল, আর একে একে দেবকীর ছয় সন্তান জন্ম নিল। কিন্তু প্রতিবারই কংস নিজের হাতে তাঁদের হত্যা করলেন। মথুরা শহরে তখন ভয় ও শোকের ছায়া—প্রজারা রাজাকে ভয় করত, তাঁর রক্তপিপাসা দেখে কাঁপত, কিন্তু কেউ সাহস করে মুখ খুলত না।

সপ্তম সন্তানের সময় এক অলৌকিক ঘটনা ঘটল। দেবকীর গর্ভে থাকা শিশু রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল এবং নন্দের পত্নী রোহিণীর গর্ভে স্থান নিল। এই সন্তানই পরবর্তীতে হন বলরাম। কংস ভেবেছিলেন সন্তান মারা গেছে, কিন্তু ভাগ্য আসলে তাঁকে ছলনা করছিল।

অষ্টম সন্তানের সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, কংসের ভয় ততই বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি কঠোর পাহারার ব্যবস্থা করলেন। প্রহরীরা দিনে-রাতে প্রাসাদের চারপাশে টহল দিচ্ছিল, কারাগারের দরজায় পাহারাদার দ্বিগুণ হল। কংসের চোখে তখন শুধু আতঙ্ক—কবে সেই সন্তান জন্ম নেবে, যে তাঁর সম্রাট জীবন শেষ করবে।

মথুরার রাজপ্রাসাদে বাহ্যিক আভিজাত্য থাকলেও, ভেতরে এক অদৃশ্য ভয় ছড়িয়ে পড়েছিল। দেবতাদের ইচ্ছা, সময়ের নিয়ম, আর ভবিষ্যদ্বাণীর ছায়া—সব মিলে রাজা কংসের হৃদয় তছনছ হয়ে যাচ্ছিল।

তিনি ভাবতেন, “যদি ভাগ্যের লেখা মুছে ফেলা যেত! যদি এই ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করা যেত!” কিন্তু ইতিহাস জানে, যাকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর স্বয়ং অবতীর্ণ হন, তাকে থামানোর ক্ষমতা কোনো রাজাধিরাজের নেই।

দেবকী ও বসুদেবের বেদনা – কারাগারের দিনগুলি

কারাগারের গাঢ় অন্ধকারে দিনের আলো যেন ঢুকতেই ভয় পেত। লোহার মোটা শিক, শ্যাওলা ধরা দেয়াল, স্যাঁতসেঁতে মেঝে, আর পাথরের গায়ে লেগে থাকা পুরনো রক্তের দাগ—এ যেন জীবন্ত মৃত্যুর এক চিত্রকল্প। সেখানেই বন্দি ছিলেন রাজকুমারী দেবকী এবং তাঁর স্বামী বসুদেব।

দেবকী ছিলেন মথুরার রাজবংশের এক অপূর্বা নারী। তাঁর চোখে ছিল করুণা ও কোমলতা, কণ্ঠে ছিল ভক্তির সুর। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর খেলায়, কংসের ভ্রাতৃপ্রেম মুহূর্তে পরিণত হয়েছিল রক্তপিপাসায়। বসুদেব ছিলেন যাদব বংশের এক সৎ, নির্ভীক ও ধর্মনিষ্ঠ পুরুষ। কিন্তু তাঁর শক্তি ও সাহসও রাজা কংসের রাজনীতির কাছে পরাস্ত হয়েছিল।

প্রতিটি দিন তাঁদের জন্য এক অনন্ত যন্ত্রণা। কারাগারের ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে শুধু আকাশের এক টুকরো দেখা যেত—সেটাই ছিল তাঁদের বাইরের জগতের সাথে একমাত্র সংযোগ। মথুরার জনজীবনের হাসি, গান, উৎসব—সব তাঁদের কাছে এখন দূরের স্মৃতি।

প্রথম সন্তানের জন্মের সময়, দেবকীর বুক ভরে উঠেছিল মাতৃত্বের আনন্দে। বসুদেবের চোখে ছিল আশার আলো—হয়তো কংস তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখবেন, হয়তো কোনো অলৌকিক উপায়ে তাঁদের সন্তান বেঁচে যাবে। কিন্তু সেই আশা ভেঙে গেল এক মুহূর্তে। কংস নিজ হাতে নবজাতককে হত্যা করলেন, যেন তাঁর হৃদয়ে কোনো মানবিকতা অবশিষ্ট নেই।

দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নিলে, দেবকীর চোখে আর কান্না ছিল না—শুধু ছিল নিঃশব্দ ভয়। বসুদেব প্রতিবার চেষ্টা করতেন কংসকে বোঝাতে, “তুমি ভ্রাতুষ্পুত্রদের রক্ত দিয়ে নিজের পাপের পাহাড় গড়ছ, একদিন সেই পাহাড়ই তোমাকে চাপা দেবে।” কিন্তু কংস ছিলেন বধির—ভাগ্যের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ তাঁকে ক্রমশ পাষাণ করে তুলেছিল।

এভাবে ছয়টি সন্তান জন্মের সাথে সাথেই প্রাণ হারাল। দেবকীর মাতৃত্বের কোষাগার বারবার শূন্য হলো, কিন্তু তাঁর হৃদয়ের গভীরে একটা বিশ্বাস টিকে রইল—ঈশ্বর একদিন তাঁর সন্তানের রূপে আসবেন এবং এই অন্ধকার ভেদ করবেন।

কারাগারের দিনগুলি ছিল একই সাথে যন্ত্রণাময় ও অলৌকিক। যন্ত্রণাময়—কারণ প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যু ও বিচ্ছেদের ছায়ায় ঢাকা। অলৌকিক—কারণ মাঝে মাঝে দেবকী ও বসুদেব অনুভব করতেন, এক অদৃশ্য শক্তি তাঁদের রক্ষা করছে। রাতে তারা যখন প্রার্থনা করতেন, তখন কারাগারের দেয়াল পেরিয়ে মৃদু চন্দ্রালোকে তাঁদের মুখ ভিজিয়ে যেত। বসুদেব বলতেন—

“দেবকী, ঈশ্বর আমাদের দেখছেন। তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত পাতাও নড়ে না। অষ্টম সন্তানই আমাদের মুক্তির আলো নিয়ে আসবে।”

সপ্তম সন্তানের সময় ঘটল এক বিস্ময়কর ঘটনা। দেবকীর গর্ভে থাকা ভ্রূণ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। পরে জানা গেল, সেই ভ্রূণ যোগমায়ার কৃপায় স্থানান্তরিত হয়েছে গোকুলে, নন্দের পত্নী রোহিণীর গর্ভে। সেখানে তিনি জন্ম নিলেন বলরাম নামে। কংস এই রহস্য জানতেই পারলেন না—তিনি ভেবেছিলেন দেবকীর সন্তান মারা গেছে।

অষ্টম সন্তানের সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, কারাগারের ভেতরের বায়ু যেন আরও ভারী হয়ে উঠছিল। দেবকীর বুকের ভেতর দোলা দিচ্ছিল নতুন জীবনের স্পন্দন, আর বসুদেবের মনে মিশ্র অনুভূতি—পিতৃত্বের আনন্দ ও সন্তানের নিরাপত্তাহীনতার গভীর ভয়।

প্রতিদিন তাঁরা প্রার্থনা করতেন—“হে নারায়ণ, হে মধুসূদন, যদি সত্যিই তুমি এই ধরায় অবতীর্ণ হও, তবে আমাদের সন্তানকে রক্ষা করো, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করো।”

তখনো তাঁরা জানতেন না, সেই প্রার্থনার উত্তর খুব শিগগিরই মিলতে চলেছে, এবং মথুরার অন্ধকার রাতে এক আলো জন্ম নেবে—যিনি শুধু তাঁদের নয়, সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দূত হবেন।

অলৌকিক জন্ম – কৃষ্ণের আগমন

অষ্টম সন্তান জন্ম নেওয়ার দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি। রাত তখন গভীর, চারপাশে যেন এক ভৌতিক নীরবতা। মথুরা নগরী ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু রাজপ্রাসাদের কারাগারে ঘুমের কোনো চিহ্ন নেই—প্রহরীরা দ্বিগুণ সতর্ক, শিকলগুলো আরও শক্ত করে বাঁধা, কংসের চোখে তখন অদৃশ্য আতঙ্কের ছায়া।

দেবকীর গর্ভে তখন নতুন প্রাণের উন্মেষ। তাঁর মুখে প্রসব বেদনার ছাপ, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত শান্তি। বসুদেব তাঁর পাশে বসে হাত ধরে মৃদুস্বরে বলছেন—

“দেবকী, ধৈর্য ধরো। এই সন্তান শুধু আমাদের নয়, সমগ্র পৃথিবীর জন্য শুভ সংবাদ নিয়ে আসবে।”

রাতের আকাশে কালো মেঘ জমে উঠেছে, যমুনার দিকে গর্জন করছে বজ্রপাত। সেই সাথে রাজপ্রাসাদের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস, যেন প্রকৃতি নিজেই এই আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঠিক মধ্যরাতের মুহূর্তে হঠাৎ কারাগারের ভেতরে এক অপূর্ব আলো ছড়িয়ে পড়ল। দেয়ালের শ্যাওলা, লোহার শিক, পাথরের মেঝে—সব যেন সোনালি রঙে রূপান্তরিত হয়ে গেল। দেবকীর বুকের ভেতরে সেই আলো জ্বলে উঠল, আর এক মুহূর্তে পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন এক অপূর্ব শিশুরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

তিনি ছিলেন না সাধারণ শিশু—মাথায় ময়ূরের পাল, কপালে তিলক, কোমরে হলুদ রেশমী বস্ত্র, গলায় বুনো ফুলের মালা। তাঁর চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধরা, মুখে স্নিগ্ধ হাসি, চোখে অপরিসীম করুণা।

দেবকী বিস্ময়ে হতবাক, বসুদেব ভক্তি ও আনন্দে মাটিতে প্রণাম করলেন। তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণ নিজ কণ্ঠে বললেন—

“মাতা, পিতা, আমি তোমাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে অবতীর্ণ হয়েছি। আমার জন্মের উদ্দেশ্য হল ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও অধর্মের বিনাশ। এখনই আমাকে গোকুলে নিয়ে যাও, নন্দ-ইয়শোদার ঘরে আমি বড় হব। এখানে কংসের হাতে আমি নিরাপদ নই।”

কথা বলেই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অলৌকিক চার হাত গুটিয়ে নিলেন, হয়ে গেলেন এক সাধারণ নবজাতক শিশু।

তারপর ঘটল আরও আশ্চর্য এক ঘটনা—কারাগারের লোহার শিকল নিজের থেকেই খুলে গেল, প্রহরীরা গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল। কারাগারের দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল, যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি বসুদেবকে পথ দেখাচ্ছে।

বসুদেব শিশুকৃষ্ণকে মাথার উপর ঝুঁড়িতে রেখে যাত্রা শুরু করলেন। বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি, বজ্রপাত, আর উত্তাল যমুনা নদী। কিন্তু আশ্চর্য! বসুদেব নদীতে নামতেই জল সরে গিয়ে তাঁর জন্য পথ তৈরি করল। যমুনা যেন স্বয়ং প্রভু শ্রীকৃষ্ণের পায়ের ধূলি নিতে চাইছে। মাঝে মাঝে ঢেউ উঠে শিশুকৃষ্ণের পা ছুঁয়ে আবার শান্ত হয়ে যাচ্ছিল।

এইভাবে, মথুরার কারাগার থেকে বেরিয়ে বসুদেব এগিয়ে চললেন গোকুলের দিকে—যেখানে যশোদার ঘরে তখনও নতুন জীবনের আগমনের অপেক্ষা।

শিশু শ্রীকৃষ্ণে ঝুড়িতে শুয়ে আছেন, তাঁর ছোট্ট পা মাঝেমধ্যে নড়ছে, আর নদীর জল ঢেউ তুলে সেই পায়ে আলতো করে স্পর্শ করছে—যেন নদী নিজেই ভাগ্যবান মনে করছে। কিছু দূরে পৌঁছে নদী হঠাৎ একটু উঁচু ঢেউ তুলে শ্রীকৃষ্ণের পায়ে স্পর্শ করল, আর সাথে সাথে নেমে গেল প্রশান্ত নীরবতায়।

পথে বসুদেবের মনে একটিবারও ভয় আসেনি—মনে হচ্ছিল, অদৃশ্য কোনো শক্তি তাঁর সাথে হাঁটছে। বজ্রপাত আকাশ চিরে গেলেও শিশু শ্রীকৃষ্ণের ঝুড়িতে এক বিন্দু জল পড়ল না। যেন মেঘও জানে, এই শিশু পৃথিবীর জন্য আশার আলো।

অবশেষে গোকুলের প্রান্তে পৌঁছালেন বসুদেব। রাত তখন গভীর, গ্রামের চারপাশে শুধু বৃষ্টির শব্দ। তিনি নন্দের গৃহে প্রবেশ করলেন—সেখানে ঠিক সেই মুহূর্তে যশোদার ঘরে জন্ম নিল এক কন্যাশিশু। অলৌকিকভাবে দু’টি শিশুকে বিনিময় করে দিলেন বসুদেব—শিশু শ্রীকৃষ্ণ যশোদার কোলেতে গেলেন, আর কন্যাশিশু এলেন দেবকীর কোলেতে।

তারপর আবার ফিরে চললেন মথুরার দিকে, যমুনা তখনও শান্ত, তাঁর পদযুগল ভিজিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা জলে। প্রাসাদে পৌঁছে দেখলেন, শিকলগুলো আবার আগের মতো জুড়ে গেছে, দরজা বন্ধ, প্রহরীরা জেগে উঠছে—যেন কিছুই ঘটেনি।

এইভাবে যমুনার অলৌকিক রূপের সাক্ষী হয়ে, বসুদেব তাঁর পিতৃধর্ম পালন করলেন। আর এই যাত্রার প্রতিটি ধাপ আজও ভক্তরা জন্মাষ্টমীর রাতে স্মরণ করেন—যে রাতে ঈশ্বর নিজেই তাঁর ভক্তদের রক্ষা করতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।

গোকুলে কৃষ্ণ – ইয়শোদা ও নন্দের ঘরে উৎসব

গোকুলের প্রভাত সেদিন যেন অন্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ছিল। রাতভর বৃষ্টি শেষে আকাশে ফুটে উঠেছিল স্বচ্ছ নীল, হাওয়ায় ভেসে আসছিল কদমফুলের গন্ধ। গ্রামের প্রতিটি গলি ভরে উঠেছিল ঢাক-ঢোল, করতাল আর শঙ্খধ্বনিতে। কারণ, নন্দগৃহে জন্ম নিয়েছে এক অপূর্ব শিশু—যশোদার কোলের ধন, নন্দরাজের গর্ব, আর সমগ্র গোকুলবাসীর আনন্দের উৎস।

যশোদা দেবীর মুখে সেই মাতৃত্বের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি আলতো করে শিশু শ্রীকৃষ্ণকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন, যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ তাঁর কোলে এসে জমা হয়েছে। কৃষ্ণ তখন মৃদু হাসিতে তাকিয়ে আছেন, তাঁর চোখে ছিল আকাশের মতো গভীরতা, আর ঠোঁটে ছিল ফুলের মতো কোমলতা।

নন্দরাজ ছিলেন আপ্লুত আনন্দে। তিনি গোকুলের প্রতিটি মানুষকে ডেকে পাঠালেন—

chatgpt image aug 16, 2025, 12 58 04 pm

“এসো, এসো সবাই! আজ আমাদের ঘরে এসেছে ভগবানের বরদান। সবাই মিলে এই পবিত্র জন্মোৎসব উদযাপন করো।”

গ্রামের নারীরা শঙ্খ বাজিয়ে, মাথায় শীতল ফুলের ঝুড়ি নিয়ে নন্দগৃহে আসতে লাগলেন। কেউ আনলেন মাখন-মিশ্রিত দুধ, কেউ আনলেন নতুন কাপড়, কেউ বা শিশু শ্রীকৃষ্ণের জন্য রূপোর নূপুর। বাতাস ভরে উঠল “হরি বোল! গোবিন্দ!” ধ্বনিতে।

দুধ, দই, ঘি দিয়ে স্নান করানো হলো শিশু শ্রীকৃষ্ণকে। ফুলের বৃষ্টিতে ভিজল তাঁর ছোট্ট শরীর। তারপর তাঁকে হলুদ রেশমি বস্ত্রে জড়িয়ে, মাথায় পরানো হলো ছোট্ট ময়ূরের পাল। তাঁর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা সেই চিরচেনা দুষ্টুমি যেন ইঙ্গিত দিচ্ছিল—এই শিশু ভবিষ্যতে গোকুলে এমন সব লীলা করবেন, যা যুগে যুগে ভক্তদের আনন্দ দেবে।

বৃন্দাবনের রাখালেরা ছুটে এল গোকুলে, বাঁশি বাজিয়ে, নাচগান করে। শিশু শ্রীকৃষ্ণকে দেখেই তারা মুগ্ধ হয়ে গেল—”এ যেন স্বয়ং নারায়ণ!”—এমন কথা ফিসফিস করে ছড়িয়ে পড়ল সবার মধ্যে।

সেই দিন গোকুলে শুধু আনন্দই ছিল না, ছিল আশার আলোও। গ্রামের প্রবীণরা মনে মনে ভাবলেন—”এই শিশু আমাদের সকল দুঃখ দূর করবে, আমাদের রক্ষা করবে যে কোনো অশুভ শক্তির হাত থেকে।”

দিনভর চলল জন্মোৎসব—ভোজন, গান, নৃত্য। রাত হলে আকাশ ভরে উঠল তারার আলোতে, যেন স্বর্গও এই পবিত্র জন্ম উদযাপন করছে। ইয়শোদা দেবী শিশুকৃষ্ণকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে অনুভব করলেন—এই শিশু শুধু তাঁর নয়, গোটা পৃথিবীর সন্তান।

সেই মুহূর্তে তিনি জানতেন না, এই শান্ত, মধুর, চঞ্চল শিশু একদিন কংসের মতো অসুররাজকে ধ্বংস করবেন, অসংখ্য ভক্তের হৃদয়ে ভক্তি ও প্রেমের প্রদীপ জ্বালাবেন।

অশুভ শক্তির প্রথম আক্রমণ – পূতনা বধের আভাস

গোকুলে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর যেন আনন্দের ঢেউ বয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিনই কেউ না কেউ নন্দগৃহে এসে শিশুটিকে দেখতে চাইত। যশোদা দেবীও আনন্দের সাথে সবার হাতে তুলে দিতেন তাঁর লালকে, যেন এই সুখ সবার সাথে ভাগ করে নিতে চান। কিন্তু দূরে, মথুরার রাজপ্রাসাদে, কংসের হৃদয়ে তখন ভয় ও সন্দেহের বিষ জমতে শুরু করেছে।

অষ্টম সন্তান জন্মের খবর শোনার সাথে সাথে কংস জানত—যেখানেই থাকুক, এই শিশুকে ধ্বংস করতেই হবে। তাঁর কাছে যাদুকরী শক্তিসম্পন্ন রাক্ষসী পূতনা ছিল এক ভয়ঙ্কর হাতিয়ার। পূতনার রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতা ছিল, আর বিষমাখা দুধ দিয়ে শিশু হত্যা করার কুখ্যাতি দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে ছিল।

কংস পূতনাকে আদেশ দিল—

“গোকুলে গিয়ে সদ্যজাত সকল শিশুকে হত্যা করো। আর যদি ভাগ্যক্রমে অষ্টম সন্তান সেখানে থাকে, তবে যেন বেঁচে ফেরার উপায় না পায়।”

আদেশ পেয়ে পূতনা রওনা দিলেন গোকুলের দিকে। তাঁর আসল রূপ ছিল ভয়ঙ্কর—দীর্ঘদেহী, রক্তলাল চোখ, দাঁত তীক্ষ্ণ ছুরির মতো, কিন্তু রূপান্তরের ক্ষমতা দিয়ে তিনি নিজেকে করে তুললেন এক অপূর্ব সুন্দরী নারীতে। হাতে সোনার পাত্র, মুখে মায়াবী হাসি—যা দেখে যে কেউ বিভোর হয়ে যাবে।

গোকুলে পৌঁছে তিনি এমনভাবে আচরণ করলেন যেন কোনো দূরসম্পর্কের আত্মীয়া এসেছেন শিশুকে আশীর্বাদ দিতে। গ্রামের মানুষ তাঁকে দেখে সন্দেহ করেনি—বরং বলল, “নন্দের লালকে আশীর্বাদ করুন মা, তিনি আমাদের সকলের প্রিয়।”

যশোদা দেবীও সাদরে তাঁকে স্বাগত জানালেন। পূতনা কোলে তুলে নিলেন শিশু শ্রীকৃষ্ণকে। তাঁর বুকের ভেতর তখন প্রবল বিষমাখা দুধের মারাত্মক পরিকল্পনা, আর চোখে ছিল প্রতারণার ঝিলিক। কিন্তু শিশু শ্রীকৃষ্ণ, যিনি জন্ম থেকেই সর্বজ্ঞ, তৎক্ষণাৎ তাঁর আসল রূপ চিনে ফেললেন।

পূতনা দুধ পান করাতে শুরু করলেন, আর সেই মুহূর্তেই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দেবীয় শক্তি প্রকাশ করলেন। ছোট্ট হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলেন পূতনার দেহ, আর এমনভাবে শ্বাস টানতে লাগলেন যে বিষমাখা প্রাণশক্তি সহ তাঁর দেহের জীবনরস শুষে নিলেন।

chatgpt image aug 16, 2025, 01 03 23 pm

পূতনা যন্ত্রণায় চিৎকার করে আসল রূপে ফিরে এলেন—দৈত্যীর দেহ তখন বিশালাকারে পরিণত হয়েছে, চোখ রক্তলাল, চুল ছড়িয়ে গেছে আকাশজোড়া, আর তাঁর শেষ আর্তনাদ গোকুলের চারপাশ কাঁপিয়ে তুলল। মুহূর্তের মধ্যেই তিনি প্রাণ হারালেন, আর শিশু শ্রীকৃষ্ণ শান্তভাবে ইয়শোদার কোলেতে ফিরে এলেন, যেন কিছুই ঘটেনি।

গ্রামের মানুষ প্রথমে ভয়ে হতবাক হয়ে গেলেও দ্রুত বুঝল—এই শিশু কোনো সাধারণ সন্তান নয়। তিনি সেই শক্তি, যিনি জন্মের মুহূর্ত থেকেই অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য এসেছেন।

পূতনা বধের এই ঘটনা গোকুলবাসীর মনে একদিকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিল, আবার অন্যদিকে কংসের ভয়ের ভিত্তি আরও দৃঢ় করল। কারণ, এখন কংস জানল—যে শিশুটি তাঁর মৃত্যুর কারণ বলে ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছে, সে সত্যিই অসীম শক্তিধর।

মথুরায় অশুভের ছায়া – কংসের আতঙ্ক

মথুরার রাজপ্রাসাদ সেদিন ভয়ানক নীরব। রাজা কংস সিংহাসনে বসে আছেন, কিন্তু তাঁর চোখের দৃষ্টি যেন কোথাও দূরে—ভবিষ্যতের অন্ধকারে। প্রাসাদের দেওয়ালজুড়ে সোনার অলঙ্কার, ঝাড়বাতি, শৌখিন আসবাব—সবই যেন অর্থহীন হয়ে গেছে তাঁর কাছে। কারণ, অন্তরে একটাই চিন্তা দানা বাঁধছে—“অষ্টম সন্তান বেঁচে আছে, এবং সে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে।”

পূতনার মৃত্যুর খবর পেয়েই কংসের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। তিনি জানতেন, পূতনা সাধারণ রাক্ষসী নন—তাঁর শক্তি, কৌশল এবং নিষ্ঠুরতার জন্য তিনি অপরাজেয় ছিলেন। কিন্তু যদি সেই নারী এক নবজাতকের কাছে পরাজিত হন, তবে এই শিশু সাধারণ কেউ নয়, স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার।

কংস বারবার মনে মনে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা আওড়াতে লাগলেন—

“দেবকীর অষ্টম সন্তানই হবে তোমার মৃত্যুর কারণ…”

এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিটি শব্দ যেন তাঁর মাথায় হাতুড়ির মতো আঘাত করছিল। তাঁর অন্তরে সন্দেহ জন্ম নিল—শ্রীকৃষ্ণ শুধু গোকুলের জন্য নয়, মথুরার জন্যও অশুভ শক্তির অবসান ঘটাবেন।

তিনি সভায় ডেকে পাঠালেন তাঁর বিশ্বস্ত মন্ত্রীদের, যাদুকরদের, আর দানব সেনাপতিদের। সভায় গম্ভীর কণ্ঠে বললেন—

“গোকুলে জন্মেছে এমন এক শিশু, যে পূতনার মতো ভয়ঙ্কর রাক্ষসীকেও বধ করেছে। এই শিশু বেঁচে থাকলে আমাদের দিন ফুরিয়ে যাবে। তোমাদের কাজ, যে করেই হোক, এই শিশুকে ধ্বংস করা।”

এই আদেশে সভা ভরে উঠল অশুভ পরিকল্পনার ফিসফাসে। কেউ প্রস্তাব দিল, “ত্রিনাবর্ত” নামে এক দানবকে পাঠানো হোক, যার ঝড়তুলে দেওয়ার ক্ষমতা আছে; কেউ বলল, “শকটাসুর” নামের দৈত্যকে পাঠাতে হবে, যে গাড়ির রূপ নিয়ে আক্রমণ করবে।

কংসের চোখে তখন ভয়ের সাথে সাথে রাগও জ্বলছিল। তিনি অনুভব করছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ প্রতিটি অশুভ আক্রমণ প্রতিহত করবেন এবং সেই সাথে তাঁর মৃত্যু-দিন আরও কাছে আসবে। কিন্তু রাজা কংস ছিলেন অহংকারী—তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর কৌশল ও শক্তি দিয়ে ভাগ্যের লেখা বদলানো সম্ভব।

রাত হলে, কংস প্রাসাদের উঁচু বারান্দায় দাঁড়িয়ে মথুরার আকাশের দিকে তাকালেন। দূরে ঝলমল করছিল তারার আলো, আর যমুনার দিকে বইছিল হালকা বাতাস। তিনি ফিসফিস করে বললেন—

“যদি তুমি সত্যিই ঈশ্বর হও, তবে আমি তোমাকে চ্যালেঞ্জ করছি… আমার মৃত্যু সহজ হবে না।”

কিন্তু তাঁর অন্তরের গভীরে, কংস জানতেন—তিনি যতই চেষ্টা করুন, যতই ষড়যন্ত্র করুন, ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই ঘটবে না। আর সেই ইচ্ছা ইতিমধ্যেই নির্ধারণ করেছে তাঁর পতনের পথ।

জন্মাষ্টমীর ভক্তিমূলক তাৎপর্য – আজকের দিনে এর প্রভাব

শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য আজও একই রকম উজ্জ্বল। সময় বদলেছে, প্রাসাদ ভেঙে গিয়েছে, যুদ্ধ থেমে গেছে, কিন্তু গোকুলের সেই ছোট্ট নীলরঙা শিশুর জন্মরাত্রির গল্প এখনও কোটি মানুষের অন্তরে ভক্তি আর আনন্দের আলো জ্বালিয়ে রাখে।

chatgpt image aug 16, 2025, 01 01 22 pm

প্রাচীন কালে এই দিনটি ছিল শুধুই শ্রীকৃষ্ণজন্মের স্মরণে পূজা ও আচার পালনের উপলক্ষ। কিন্তু আজকের দিনে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী হয়ে উঠেছে ভক্তি, সংস্কৃতি ও ঐক্যের উৎসব। হিন্দু সমাজের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষও এই দিনে শ্রীকৃষ্ণের প্রেম, দয়া ও সত্যের বাণী স্মরণ করেন।

উপবাস ও ভজন-সঙ্কীর্তন

আজকের দিনে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভক্তরা উপবাস পালন করেন। কেউ ফলাহার করেন, কেউ সম্পূর্ণ নিরাহারে থাকেন। মন্দিরে মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মলীলা, গীতাগানের আসর, ভজন-সঙ্কীর্তন চলে নিরবচ্ছিন্ন। মধ্যরাতে, যখন বিশ্বাস করা হয় শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন ঘণ্টা, শঙ্খ ও কীর্তনের ধ্বনি চারপাশ ভরিয়ে দেয়।

দই-হাণ্ডি উৎসব

মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও উত্তর ভারতের বহু জায়গায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পরদিন ‘দই-হাণ্ডি’ উৎসব হয়। কৃষ্ণের শৈশব লীলা—দই, মাখন চুরির আনন্দ—পুনরায় জীবন্ত করে তোলার জন্য মানুষ পিরামিড আকারে দাঁড়িয়ে উঁচুতে বাঁধা দইভর্তি হাঁড়ি ভাঙেন।

আধ্যাত্মিক শিক্ষা

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কেবল এক অলৌকিক ঘটনা নয়—এটি অন্যায়, অহংকার ও অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক। আজকের দিনে, যখন সমাজে অশান্তি, হিংসা ও বিভাজন দেখা দেয়, জন্মাষ্টমী আমাদের শেখায়—

  • সত্য সর্বদা অন্যায়কে পরাজিত করে।
  • ভক্তি ও প্রেম দিয়ে যে কোনও বাধা অতিক্রম করা যায়।
  • জীবনে যত বড় কষ্টই আসুক, ঈশ্বরের ইচ্ছায় সব সম্ভব।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব

আজকের ডিজিটাল যুগেও জন্মাষ্টমীর প্রভাব অপরিসীম। সারা বিশ্বের কোটি ভক্ত অনলাইনে ভজন, কৃষ্ণলীলা, গীতা পাঠে অংশ নেন। বিদেশের মন্দিরগুলোতেও মধ্যরাত পর্যন্ত পূজা ও কীর্তনের আয়োজন হয়। কৃষ্ণের জীবন ও গীতা থেকে মানুষ অনুপ্রেরণা পান ধৈর্য, সততা ও দায়িত্ববোধ শেখার জন্য।

চিরন্তন প্রেরণা

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অশুভ যত শক্তিশালীই হোক, একদিন তা পরাজিত হবেই। জীবন যতই অন্ধকারে ঢাকা থাকুক, ঈশ্বরের আলো সেই অন্ধকার ছেদ করে আমাদের মুক্তির পথে নিয়ে যাবে।

মথুরা থেকে গোকুল, কারাগার থেকে যমুনার তীর—এই পুরো যাত্রা এক অনন্ত শিক্ষা দিয়ে যায় যে, ভক্তি, প্রেম ও ন্যায়ের পথেই জীবনের সাফল্য। আর সেই পথের দিশারী হয়ে আজও কৃষ্ণ আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন, চিরকাল, চিরন্তন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *