দামীনি- নারীর সাহস ও জয়ী সংগ্রামের গল্প
সেই অন্ধকার রাত
শীতের রাতে কলকাতা যেন একেবারে অন্য রূপ নেয়। দিনের কোলাহল, ভিড়ভাট্টা, গাড়ির হর্ন—সব মিলিয়ে যে শহরটা সারাদিন ব্যস্ত থাকে, রাত ন’টার পর থেকে সেখানে নেমে আসে এক অদ্ভুত নির্জনতা।
রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো হলুদ আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে, তবে অনেক জায়গায় বাল্বগুলো ঝিমিয়ে আসছে, আলো-আঁধারের ফাঁক তৈরি করছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া চায়ের দোকানের সামনে গুটিসুটি মেরে বসে আছে কিছু কুকুর। হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে, মাঝে মাঝে কারও ফ্ল্যাটের জানলা থেকে ভেসে আসছে টিভির শব্দ।
দামীনি সেদিন কলেজ থেকে দেরি করে ফিরছিল। তার বাসের স্টপেজ থেকে বাড়ি পর্যন্ত একটা সরু গলি পার হতে হয়। সাধারণত ভিড় থাকে, কিন্তু সেদিন যেন গলিটা অস্বাভাবিকভাবে ফাঁকা।
হেডফোনে বাজছিল ধ্রুপদী কোনো গান। তবুও বুকের ভেতর একটা অকারণ আতঙ্ক কাঁপছিল।
হঠাৎ পিছন থেকে ভেসে এলো বাইকের হর্ন আর চাকা ঘষার শব্দ। তিনটে মোটরবাইক এসে দাঁড়াল তার সামনে।
চারজন ছেলে—কারও গায়ে লেদার জ্যাকেট, কারও হাতে বিড়ি। চোখেমুখে হিংস্র হাসি।

— “এই শুনছো, একা যাচ্ছো কই?” একজন বাইক থেকে নামতে নামতে বলল।
— “এত রাতে মেয়েরা একা বেরোয় নাকি?” আরেকজন দাঁত খিঁচিয়ে হেসে উঠল।
দামীনি কিছু না বলে পথের একপাশ দিয়ে বেরোতে চাইলো। বুক ধকধক করছে, গলা শুকিয়ে কাঠ। ফোনটা আঁকড়ে ধরল হাতে, কিন্তু আঙুল কাঁপতে থাকায় কল করতে পারল না।
ছেলেগুলো পথ আটকাল।
— “ওরে বাবা! এত গম্ভীর কেন? একটু হাসো না, ভয় পাচ্ছো নাকি?”
— “চুপচাপ আমাদের সঙ্গে এসো, রাতটা মজা হবে।”
ওদের গলার স্বর, শরীরী ভঙ্গি, চোখের চাহনি—সব মিলিয়ে হিংস্রতার আগাম বার্তা।
দামীনি এবার দৃঢ় গলায় বলল,
— “রাস্তা ছাড়ো, না হলে পুলিশ ডাকব।”
একজন তার ফোনটা কেড়ে নিয়ে হেসে বলল—
— “পুলিশ? এই গলিতে? এত রাতে? স্বপ্নেও আসবে না।”
অন্যজন পেছন থেকে তার ব্যাগ টেনে ধরল। দামীনি প্রাণপণে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করল। সে চিৎকার করছিল—
— “বাঁচাও! কেউ আছেন?”
কিন্তু চারপাশ যেন বধির। কুকুরগুলো দূর থেকে ঘেউ ঘেউ করছে, জানলাগুলো বন্ধ। ব্যস্ত শহরের এই গলিটা হঠাৎ যেন কবরের মতো নির্জন।
ছেলেগুলো এখন পুরোপুরি হিংস্র হয়ে উঠল। একজন বলল—
— “এত নাচানাচি কিসের? দু’ঘা খেলেই শান্ত হয়ে যাবে।”
তারপর শুরু হলো টানাহেঁচড়া। দামীনি আঁচড়াল, কামড়াল, হাত-পা চালিয়ে প্রতিরোধ করল। কিন্তু চারজনের শক্তির কাছে সে ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। চোখের সামনে শুধু ঝলসে উঠছিল বাইকের হেডলাইট, আর শুনতে পাচ্ছিল নোংরা হাসির প্রতিধ্বনি।
শেষ মুহূর্তে তার মাথা ধাক্কা খেল রাস্তার ধারে লোহার গেটে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ল। আর কিছু মনে রইল না—অচেতন হয়ে ধপ করে পড়ে গেল সে।
গলির অন্ধকারে শুধু পড়ে রইল তার নিথর দেহ, আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বই আর কাগজ।
আকাশের ওপরে ম্লান চাঁদ যেন সাক্ষী হয়ে দেখছিল সেই রাতের নিষ্ঠুরতা।
প্রতিবাদের আগুন
হাসপাতালের সাদা দেয়ালে জীবাণুনাশকের গন্ধ। সারি সারি বেডের মধ্যে একপাশে শুয়ে আছে দামীনি। মাথায় ব্যান্ডেজ, হাতে স্যালাইনের নল ঢোকানো, শরীরের নানা জায়গায় ক্ষতচিহ্ন। ঘুম আর জেগে থাকার সীমান্তে দুলছিল সে।
চোখ খুলতেই কানে ভেসে এলো মায়ের কান্নার শব্দ।
— “ওরে মা, আমার মেয়েকে এভাবে কেউ কীভাবে শেষ করে দিতে চাইলো?”
বাবা স্তব্ধ, তাঁর চোখ শুকনো হলেও মুখে গভীর যন্ত্রণা খোদাই হয়ে আছে।
আত্মীয়স্বজন ভিড় করছে, কেউ কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, কেউ পরামর্শ দিচ্ছে—
— “এইসব প্রকাশ্যে আনো না, মানসম্মান শেষ হয়ে যাবে।”
— “চুপচাপ মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দাও, সব ভুলে যাক।”
দামীনি ওদের কথা শুনছিল। বুকের ভেতর আগুন জ্বলছিল। “আমি কি অপরাধ করেছি? আমি কেন লজ্জা পাব?”
সেই রাতের বিভীষিকা এখনও তার শরীরজুড়ে ব্যথা দিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করলে ভেসে ওঠে বাইকের আলো, হিংস্র হাসি, অশ্লীল গালাগালির প্রতিধ্বনি। কিন্তু ভয়কে গিলে নিয়ে সে ভাবল—
“না, আর চুপ থাকব না। এবার আমি বলব।”
প্রতিবাদের প্রথম পদক্ষেপ
কিছুদিন পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল সে। শরীর দুর্বল, কিন্তু মন জ্বলে উঠেছে প্রতিবাদের আগুনে। একদিন স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক এলেন তার খোঁজ নিতে।
— “তুমি চাইলে কথা বলতে পারো, না চাইলে লিখব না।”
দামীনি ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসল। কাঁপা কণ্ঠে বলল—
— “আমি চুপ থাকতে চাই না। ওরা অপরাধ করেছে, আমি কেন লুকোব? আমি লড়ব।”
সেই সাক্ষাৎকার ছাপা হলো পত্রিকায়। শিরোনাম—
“আমি ভুক্তভোগী নই, আমি সংগ্রামী — দামীনি”
পত্রিকাটা পড়েই শহর জেগে উঠল। কলেজে মিছিল বেরোল, মেয়েরা পোস্টার হাতে দাঁড়াল—
“আমরা সবাই দামীনি।”
ভয়ের চক্র
কিন্তু অপরাধীদের পরিবার ছিল প্রভাবশালী। পুলিশের কিছু সদস্যও ওদের হয়ে কাজ করছিল। মাঝরাতে দামিনির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হুমকি দিল কয়েকজন অচেনা লোক।
— “চুপ করে থাকো, নইলে আরও খারাপ হবে।”
বাবা-মা ভয়ে কাঁপছিলেন। মা বললেন—
— “বাবু, চুপ করে থাক না। তোকে হারালে আমি বাঁচব কী করে?”
দামীনি মায়ের হাত ধরে শান্ত স্বরে বলল—
— “মা, ওই রাতেই আমার ভয় শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি শুধু লড়াই করব।”
কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, এক্সাইড মোড়ে একের পর এক আন্দোলন শুরু হলো। মশাল হাতে দাঁড়াল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ।
“ন্যায় চাই, দামীনি চাই” ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল আকাশে।
দামীনি সোজা দাঁড়িয়ে মিছিলে গলা মিলিয়ে বলল—
— “আমার কণ্ঠস্বর কেড়ে নেওয়া যাবে না। আজ আমি একা নই, প্রতিটি মেয়ে আমার সঙ্গে হাঁটছে।”
শহরের অন্ধকার গলি, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল তার দুঃস্বপ্ন, সেখানেই যেন ধীরে ধীরে আলোর প্রদীপ জ্বলতে শুরু করল।
আদালতের লড়াই
শীতের সকালের কোর্ট চত্বর। লাল ইটের বিশাল ভবনের সামনে লম্বা লাইন—আইনজীবী, আসামির আত্মীয়, কৌতূহলী মানুষ আর সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা। গেটের বাইরে ব্যানার:
“দামিনির ন্যায় চাই”
চারপাশে স্লোগান—
“দোষীদের শাস্তি চাই, নারীর মর্যাদা চাই!”
দামীনি সাদা সালোয়ার কামিজ পরে বাবার হাত ধরে আদালতে ঢুকল। তার মুখে কোনো ভয় নেই, চোখে অদ্ভুত দৃঢ়তা। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাকে ঘিরে ধরল, সাংবাদিকেরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল—
— “দামীনি, তুমি কি আজ সাক্ষ্য দেবে?”
— “তুমি কি ভয় পাচ্ছো?”
দামীনি থেমে না গিয়ে শুধু বলল,
— “আমি সত্য বলব। ভয় দেখিয়ে আমাকে থামানো যাবে না।”
ঘড়ির কাঁটা দশটা বাজল। বিচারক প্রবেশ করলেন। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্ত চারজন মাথা উঁচু করে হাসছে, যেন তারা জানে রায় তাদের পক্ষেই যাবে। তাদের পরিবারের লোকেরা কোর্টে বসে চোখ রাঙাচ্ছে।
শুরু হলো সাক্ষ্যগ্রহণ। দামীনি ধীরে ধীরে কাঠগড়ায় দাঁড়াল। তার গলা কাঁপছিল, কিন্তু কথাগুলো স্পষ্ট ও জোরালো।
— “ওই রাত আমি ভুলতে পারব না। তারা আমাকে রাস্তায় থামাল, টেনে নিয়ে গেল। আমি লড়াই করেছি, চিৎকার করেছি, কিন্তু ওরা আমাকে নরকযন্ত্রণা দিয়েছে। আজ আমি শুধু চাই, ওরা শাস্তি পাক।”
কোর্টরুম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শুধু কলমের খসখস শব্দ।
আসামিপক্ষের আক্রমণ
অভিযুক্তদের আইনজীবী উঠে দাঁড়াল। তার কণ্ঠস্বর ধারালো—
— “আপনি বলছেন রাত ন’টার পর একা ফিরছিলেন? কেন? একজন সুশীল মেয়ে এত রাতে একা ফেরে?”
— “আপনার পোশাক কেমন ছিল?”
— “আপনার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব কেউ ছিল না কেন?”
দামীনি দাঁত চেপে শুনছিল। তারপর সোজা হয়ে উত্তর দিল—
— “আমি যখন পড়াশোনা শেষ করি, তখন যে সময়ই হোক, বাড়ি ফেরাটা আমার অধিকার। আমার পোশাক অপরাধ নয়, অপরাধ করেছে ওরা। আমার একা থাকা দোষ নয়, দোষ হলো ওদের নৃশংসতা।”
কোর্টরুমে গুঞ্জন উঠল। অনেকেই চাপা স্বরে বলল—“দেখেছো, কী সাহস মেয়েটার।”
আইনজীবী আরও প্রশ্ন ছুঁড়ল, কিন্তু প্রতিবারই দামীনি শান্ত গলায় সত্যি বলল। যেন প্রতিটি শব্দে সমাজের মুখোশ খুলে যাচ্ছে।
বিচারকের মন্তব্য
বিচারক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর নরম গলায় বললেন—
— “নারীর স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ নয়। রাত, পোশাক, একা থাকা—কোনো কিছুই তার উপর আক্রমণের কারণ হতে পারে না। আদালত এই সত্য মেনে চলবে।”
এই কথায় দামীনি যেন নতুন করে শক্তি পেল।
শুনানি শেষে দামীনি বেরোতেই বাইরে মিছিলরত মেয়েরা ফুল ছুঁড়ে দিল। কেউ বলল—
— “তুমি আমাদের সাহস।”
— “তুমি হারো না, আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি।”
দামীনি সেদিন প্রথমবার অনুভব করল—সে আর একা নেই। তার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে হাজারো মেয়ের কণ্ঠস্বর।
আন্দোলনের ঝড়
দামিনির মামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চারদিকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হলো। প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় তার নাম, প্রতিটি টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ—
“কলকাতায় দামিনির উপর নৃশংসতা, বিচার চাইছে গোটা শহর।”
রাস্তায় আগুন
কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে এল।
“আমরা নীরব নই”,
“নারীর নিরাপত্তা আমাদের অধিকার”—
এমন স্লোগানে মুখর হলো কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলা, গড়িয়াহাট।
মেয়েরা একে অপরের হাত ধরে মশাল মিছিল করল রাতভর। পুরুষদের ভিড়েও রাগ ফুটে উঠল—
— “মেয়েরা আমাদের মা, বোন, বন্ধু। তাদের উপর আক্রমণ মানে আমাদের উপর আক্রমণ।”
ক্লান্তিহীন স্লোগান আকাশ কাঁপিয়ে দিল।
সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে দামীনি হয়ে উঠল প্রতিরোধের প্রতীক।
হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে লাগল—
#JusticeForDamini
#WeStandWithHer
অসংখ্য মানুষ প্রোফাইল ছবিতে কালো ফিতা বেঁধে সমর্থন জানাল। কেউ লিখল—
— “যদি আজ দামিনির ন্যায় না হয়, কাল কোনো মেয়েই নিরাপদ নয়।”
সরকারের চাপ
মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত চাপে পড়ে গেল। টিভি ক্যামেরার সামনে এক মন্ত্রী বলল—
— “আমরা দ্রুততম সময়ে চার্জশিট দাখিল করব, দোষীরা ছাড় পাবে না।”
কিন্তু মানুষের মনে প্রশ্ন—“শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবের বিচার কবে?”
দামীনি—প্রতিরোধের প্রতীক
এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দামীনি নিজে।
তার বাড়ির সামনে প্রতিদিন ভিড় জমত সাংবাদিক আর প্রতিবাদকারীদের।
সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত, মাঝে মাঝে সংক্ষিপ্ত কিছু বলত—
— “আমি লড়াই করছি, আপনারা পাশে থাকুন।”
মানুষজন তার কথায় আগুনের মতো শক্তি পেত।
এক ঝড়ো রাত
এক রাতে টিভিতে খবর এলো—আসামিদের প্রভাবশালী পরিবার চাপ সৃষ্টি করছে, সাক্ষীরা ভয় পাচ্ছে।
মুহূর্তেই চারদিকে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল ক্ষোভ।
ঢাক বাজিয়ে মানুষ নামল রাস্তায়।
— “ন্যায় চাই, ন্যায় চাই!”
আকাশ কাঁপল বজ্রপাতের মতো স্লোগানে। পুলিশ ব্যারিকেড ভাঙার উপক্রম হলো।
সমাজের বদল
দামিনির গল্পে মানুষ হঠাৎ বুঝল—
এটা শুধু এক মেয়ের লড়াই নয়, এ লড়াই প্রতিটি মেয়ের, প্রতিটি পরিবারের।
একজনের কণ্ঠস্বর এখন হয়ে উঠেছে এক জনপদের গর্জন।
রায়ের দিন
সকালের সূর্য উঠতেই কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে মানুষের ঢল নামল।
টিভি ক্যামেরা, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ—সবাই অপেক্ষা করছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের।
ব্যারিকেড ঘিরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা।
দামীনি হুইলচেয়ারে বসে আদালতের ভেতরে ঢুকল, তার চোখে ক্লান্তি থাকলেও ভেতরে এক অদম্য দৃঢ়তা।
বিচারকের কণ্ঠ
কোর্টরুমে পিনপতন নীরবতা। বিচারক গম্ভীর কণ্ঠে রায় পড়তে শুরু করলেন—
— “আসামিরা নির্দোষ নয়, তাদের অপরাধ প্রমাণিত। এরা সমাজের কলঙ্ক, মানবতার শত্রু। তাই আদালত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করছে।”
সেই মুহূর্তে পুরো আদালত যেন বজ্রপাতের মতো প্রতিধ্বনিতে ফেটে পড়ল।
“ন্যায় হলো! ন্যায় হলো!”
মানুষের অশ্রু আর আনন্দ
বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন হাততালি দিয়ে স্লোগান তুলল—
“দামীনি তুমি লড়াই করেছ, তুমি জিতেছ!”
অনেকের চোখে জল, আবার অনেকেই হাত আকাশের দিকে তুলে বলছে—
“এই দিনটা ইতিহাসে লেখা থাকবে।”
দামীনি—জয়ী নারী
রায় শোনার পর দামীনি মাথা নত করল না।
চোখের জল মুছে সে দৃঢ় কণ্ঠে বলল—
— “এটা শুধু আমার জয় নয়, প্রতিটি মেয়ের জয়। আজকের পর কোনো মেয়ে যেন ভয় না পায়—এই কামনা করি।”
তার কণ্ঠে এমন শক্তি ছিল যে, সেদিন থেকে মানুষ তাকে ডাকতে শুরু করল—
“নারী শক্তির প্রতীক, দামীনি।”
শহরের প্রতিজ্ঞা
রাতের কলকাতা সেদিন নতুন আলোয় ঝলমল করল।
রাস্তার মোড়ে, দেয়ালে, মানুষের মনে একটাই প্রতিজ্ঞা—
“আর কোনো দামিনী নয়, আমরা রুখে দাঁড়াব।”
এভাবেই এক অন্ধকার রাতের গল্প শেষ হলো এক নতুন ভোরে।
দামীনি হয়ে উঠল ইতিহাস, হয়ে উঠল প্রতিরোধের আগুন।

 
		 
			 
			 
			 
			 
			