চিঠি

বিরহের চিঠি

“কাগজে কলম ধরতেই হাত কেঁপে উঠল, যেন এই প্রথমবার নয়, শেষবারের মতো তোমাকে চিঠি লিখছি—আমার অনামিকা।”

প্রথম দেখা

গ্রামের বাড়িটা যেন উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল। উঠোনে মাদুর পাতা, পাড়ার কাকিমারা ব্যস্ত চায়ের কাপ আর মিষ্টির থালা সাজাতে। আর ঘরের ভেতরে বসে আছে অনামিকা, নতুন শাড়িতে লজ্জায় লাল হয়ে।

ঘরে ঢুকলেন অভিজিৎ তার বাবা-মাকে নিয়ে। প্রথমে আনুষ্ঠানিক কুশল বিনিময়, তারপর চায়ের কাপ হাতে এগিয়ে এল অনামিকা। কাপ এগোতে গিয়ে হাত কেঁপে উঠল, সামান্য চা গড়িয়ে পড়ল। লজ্জায় মাথা আরও নিচু হয়ে গেল তার।

অভিজিৎ হেসে বলল,
— “ভয় পাচ্ছেন কেন? এমনিই তো একটা কথা বলার আড্ডা।”

অনামিকা লাজুক গলায় উত্তর দিল,
— “ভয় পাচ্ছি না… একটু অচেনা লাগছে। এত মানুষের ভিড়ে…”

চুপচাপ তাকিয়ে রইল দু’জন। চারপাশের কোলাহল হঠাৎ যেন দূরে সরে গেল। আত্মীয়রা আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তাদের দৃষ্টি ছিল শুধু একে অপরের দিকে।

মুহূর্তের জন্য অভিজিতের মনে হলো—
“এই লাজুক চোখেই হয়তো আমি আমার সমস্ত শান্তি খুঁজে পাব। এমন সরল দৃষ্টি আমার ক্লান্তি মুছে দিতে পারে।”

অন্যদিকে অনামিকা ভাবছিল—
“অচেনা মানুষ, অথচ চোখে কতটা আন্তরিকতা! মনে হচ্ছে এই মানুষটার সঙ্গে চলার পথটা হয়তো নিরাপদ হবে।”

অভিজিৎ আলতো করে প্রশ্ন করল,
— “আপনি পড়াশোনা চালাচ্ছেন তো?”

অনামিকা চুপচাপ মাথা নেড়ে বলল,
— “হ্যাঁ, তবে সংসারের পর কতটা পারব জানি না।”

অভিজিৎ মৃদু হেসে উত্তর দিল,
— “যতটুকু আপনি চান, ততটুকুই সম্ভব হবে। আমি চাই, আপনার স্বপ্নগুলো যেন থেমে না যায়।”

এই কথাগুলো শুনে অনামিকার বুক কেঁপে উঠল। অচেনা মানুষটির গলায় এমন ভরসা—এটা যেন এক অদ্ভুত আশ্বাস।

প্রথম দেখার সেই ছোট্ট আলাপ, সেই দৃষ্টি বিনিময়ই হয়তো তাদের সম্পর্কের ভিত্তি হয়ে রইল। দু’জনের চোখে কথা বলল, যদিও ঠোঁটে কোনো স্বীকারোক্তি আসেনি।

বিয়ের দিন

শীতের রাত, তারার আলোয় ভরা আকাশ। প্যান্ডেলে রঙিন আলো জ্বলছে, ঢাক-ঢোলের শব্দে উঠোন কেঁপে উঠছে। চারদিকে মানুষের কোলাহল, হাসি-আনন্দ, মিষ্টির গন্ধ—সবকিছু মিলিয়ে অনামিকার বিয়ের বাড়ি আজ যেন এক আলাদা পৃথিবী।

অনামিকা কনের সাজে বসে আছে। লাল বেনারসি শাড়ি, সোনার গয়নায় ভরে উঠেছে তার অবয়ব। তবুও বুকের ভেতর কাঁপুনি থামছে না। “আজ থেকে কি তবে নতুন এক জীবন শুরু হতে যাচ্ছে?”—ভাবছিল সে।

chatgpt image aug 17, 2025, 12 04 53 am

অন্যদিকে অভিজিৎ বারাত নিয়ে এসে বসেছে। আত্মীয়-স্বজনদের ভিড়ে সে হাসছে ঠিকই, কিন্তু ভেতরে এক অদ্ভুত অস্থিরতা। “অচেনা মেয়েটি আজ আমার স্ত্রী হতে চলেছে। আমি কি পারব ওকে সারাজীবন সুখে রাখতে?”

বিয়ের আসরে

মন্ত্রপাঠ শুরু হলো। পুরোহিত বললেন, “মালাবদল হোক।”
চারপাশে উল্লাস। ঢাকের শব্দ আরও জোরে বাজতে লাগল।

অভিজিৎ মালা হাতে তুলে নিল। লাজুক অনামিকা চোখ নামিয়ে নিলেও, মুহূর্তের জন্য দু’জনের দৃষ্টি মিলল। সেই দৃষ্টিতেই যেন এক অদ্ভুত প্রতিশ্রুতি লুকিয়ে ছিল। অভিজিৎ মালা পরিয়ে দিল, অনামিকার ঠোঁটে অল্প হাসি ফুটে উঠল।

তারপর এল কনে দেখা। ঘোমটা সামান্য তুলে অভিজিৎ তাকাল অনামিকার দিকে। একফোঁটা কপালে সিঁদুর ছুঁইতেই চারপাশে উল্লাসে ভরে উঠল উঠোন। কিন্তু তাদের ভেতরে তখন ছিল এক গভীর নীরবতা।

ঘরোয়া আড্ডায় আত্মীয়রা যখন হেসে–খেলে গল্প করছে, হঠাৎ এক ফাঁকে অনামিকা ধীরে বলল,
— “আজ সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। ভয়ও করছে…”

অভিজিৎ মৃদুস্বরে বলল,
— “ভয় কেন? আমি তো আছি পাশে। তুমি একা নও।”

অনামিকা চোখ নামিয়ে বলল,
— “তাহলে প্রতিশ্রুতি দিন—যাই হোক, আমাকে কখনো একা ফেলে যাবেন না।”

অভিজিৎ তাকিয়ে থাকল তার চোখে, বলল,
— “প্রতিশ্রুতি দিলাম। তুমি আমার জীবনের অংশ, তোমাকে একা ফেলে রাখার প্রশ্নই আসে না।”

কথাগুলো শুনে অনামিকার গাল বেয়ে নেমে এলো এক বিন্দু অশ্রু। সেটি আনন্দের, বিশ্বাসের—এক নতুন জীবনের শুরু হয়ে উঠল সেই মুহূর্তে।

সংসারের প্রথম দিনগুলো

বিয়ের ক’দিন পরেই বাড়ি ভরে উঠল নতুন সংসারের গন্ধে। সকালবেলার রান্নাঘরে অনামিকার প্রথম লুচি ভাজার শব্দে যেন শাশুড়ির মুখে হাসি, আর অভিজিতের চোখে গর্ব।

একদিন সকালে অনামিকা সবে রান্নাঘর থেকে বেরিয়েছে। তার হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ।
অভিজিৎ টেবিলে বসে ছিল কাগজ খুলে। অনামিকা কাপটা রেখে লাজুক গলায় বলল,
— “চা… হয়তো একটু বেশি চিনি হয়ে গেছে।”

অভিজিৎ চুমুক দিয়েই মিষ্টি হেসে বলল,
— “না, একদম ঠিক হয়েছে। তবে… তোমার হাতের স্বাদ থাকলেই মিষ্টি হবে।”

লাজুক অনামিকা মুখ নামিয়ে হেসে ফেলল। এ হাসি ছিল তার ভেতরের ভয় ধীরে ধীরে গলে যাওয়া, বিশ্বাস জন্ম নেওয়া।

সন্ধ্যার আড্ডা

সন্ধ্যা নামলেই দু’জনে ছাদে গিয়ে বসত। চারপাশে গ্রামের নিরবতা, দূরে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, আর ওপরে আকাশভরা তারা।

একদিন অনামিকা ফিসফিস করে বলল,
— “জানেন, ছোটবেলা থেকে আকাশের তারা দেখে আমি গল্প বানাতাম। মনে হতো, ওগুলো আমার বন্ধু।”

অভিজিৎ মৃদু হেসে উত্তর দিল,
— “তাহলে আজ থেকে এক নতুন তারা জুড়ে দিন—আমি। আমি থাকব আপনার গল্পে, আপনার আকাশে।”

অনামিকা তাকিয়ে থাকল তার দিকে। মনে হলো—এ মানুষটার পাশে থাকলে সত্যিই কোনো ভয় নেই।

মনের ভাবনা

অনামিকার মনে হচ্ছিল, সংসার হয়তো এমনই হয়—ছোট ছোট মুহূর্ত, সামান্য আলাপ আর একে অপরকে আঁকড়ে ধরা।
অভিজিতের বুকেও ভেসে উঠল স্বপ্ন—“আমি যদি এক জীবনে ওকে শুধু হাসাতে পারি, তাহলেই আমার বাকি চাওয়া পূর্ণ হবে।”

তাদের নতুন সংসার ভরে উঠছিল মিষ্টি সখ্যতায়। তবে সেই আনন্দের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক অনিশ্চয়তা—সংসার গড়তে আয়ের দায়, ভবিষ্যতের স্বপ্নের টানাপোড়েন। আর সেখান থেকেই শুরু হতে চলেছিল বিরহের দিন।

বিদেশযাত্রার প্রস্তুতি

বিয়ের মাত্র কয়েক মাস কেটেছে। অনামিকা ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে নতুন সংসার, নতুন মানুষ, নতুন দায়িত্ব। আর অভিজিতও যেন প্রতিদিন নতুন করে আবিষ্কার করছিল তার স্ত্রীকে—লাজুক অথচ ভেতরে এক অদম্য শক্তি আছে।

কিন্তু সংসারের হাসি–খুশির আড়ালেই জমতে লাগল এক অদৃশ্য দুশ্চিন্তা। বাবার ছোট ব্যবসা দিনকে দিন টানাটানির মধ্যে, সংসারের খরচ সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। এক সন্ধ্যায় অভিজিত চুপচাপ বসেছিল ছাদের এক কোণে।

অনামিকা এসে পাশে বসল।
— “চুপ করে আছেন কেন?”

অভিজিত এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
— “ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে কত সুখ–শান্তিতে সংসার সাজাবো। কিন্তু এই আয়ে সব সামলানো যাচ্ছে না। একটা সুযোগ এসেছে—মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে যেতে পারি। যদি যাই, অনেকটা ভালো হবে… তবে তোমাকে একা রেখে যেতে হবে।”

কথাটা শুনেই অনামিকার বুকের ভেতর কেঁপে উঠল। কপালের ভাঁজে যেন অশ্রু জমে উঠল, কিন্তু মুখে চাপা দিল সে।
— “তাহলে… কবে যেতে হবে?”

অভিজিত তাকিয়ে রইল তার স্ত্রীর দিকে। সে আশা করছিল, হয়তো অনামিকা তাকে বাধা দেবে, বলবে ‘যেও না’। কিন্তু এ মেয়ে বোঝে দায়িত্ব, বোঝে সংসারের টানাপোড়েন।

অনামিকা গলা ভারী করে বলল,
— “আমাদের সংসারটা তো স্বপ্নে গড়া, তাই না? যদি তোমাকে ছাড়া সেই স্বপ্ন পূরণ হয়, আমি মানতে রাজি আছি। তুমি যাও। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন—যেখানেই থাকুন, আমার হাতটা ছাড়বেন না। মনের হাতটা।”

অভিজিতের চোখ ভিজে উঠল। সে আস্তে করে স্ত্রীর হাত ধরল, শক্ত করে চেপে ধরল।
— “তুমি আছো বলেই আমি যেতে পারব। তুমি না থাকলে আমি অর্ধেক মানুষ হয়ে যেতাম।”

বিদায়ের প্রস্তুতি

দিনগুলো যেন হঠাৎই দ্রুত ফুরোতে লাগল। পাসপোর্ট, ভিসা, কাগজপত্র—সব গুছিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রতিটি গুছোনোর সঙ্গে সঙ্গে যেন সংসারের দেয়ালে জমছিল এক অদৃশ্য হাহাকার।

রাতে অনামিকা বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলত, কিন্তু অভিজিতের সামনে কখনো অশ্রু দেখাত না। অন্যদিকে অভিজিতও বারবার স্ত্রীর চুলে হাত বুলিয়ে মনে মনে বলত—“কী করে ওকে রেখে যাবো?”

এক রাতে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে অভিজিত ডায়েরি খুলে চিঠি লিখতে লাগল।
“প্রিয় অনামিকা,
তোমাকে রেখে বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবতেই বুকটা হু হু করছে। কিন্তু বিশ্বাস করো, এই দূরত্ব শুধু শরীরের, মনের নয়। আমি প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমাকেই খুঁজব। হয়তো ক’টা বছর পরে যখন ফিরে আসব, তখন আবার নতুন করে আমাদের সংসার শুরু হবে।”

কলম থামল, কিন্তু চোখের জলে ভিজে উঠল ডায়েরির পাতা।

বিদায়ের দিন ও প্রথম চিঠি

ভোরের আকাশে তখনও সূর্য ওঠেনি। অথচ অভিজিত আর অনামিকার সংসারে যেন সূর্য ঢলে পড়েছে আগেভাগেই। বিদায়ের দিন এসেছে।

বাড়ির উঠোনে ছোটখাটো হৈচৈ চলছে—ট্রাভেল ব্যাগ, নথিপত্র, আত্মীয়স্বজনের দৌড়ঝাঁপ। অথচ এই ভিড়ের মাঝেই অনামিকা নিঃশব্দ। শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার চোখ মুছছে। সবার সামনে ভেঙে পড়তে চাইছে না, কিন্তু বুকের ভেতরটা টলমল করছে নদীর মত।

অভিজিতের মা ফিসফিস করে বললেন—
— “মাগো, শক্ত থেকো। তোর হাসিটা দরকার ওর জন্য।”

অনামিকা মাথা নেড়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করল। অথচ তার হাত কাঁপছে, বুকের ভেতর হাহাকার জমছে।

বিমানবন্দরের হাহাকার

ট্যাক্সি এসে দাঁড়াতেই বিদায়ের মুহূর্ত যেন আরও কাছে চলে এলো। অনামিকা স্বামীকে আঁকড়ে ধরল একবার।
— “যত দূরেই যান, ভুলবেন না আমি অপেক্ষা করছি।”

অভিজিত কাঁপা গলায় বলল—
— “তুমি থাকলেই আমি বাঁচব। মনে রেখো, তোমার জন্যই আমি যাচ্ছি।”

চোখ ভরা অশ্রু নিয়েই অভিজিত গাড়িতে উঠল। জানলার ফাঁক দিয়ে এক ঝলক হাত নাড়ল স্ত্রীর দিকে। অনামিকার মনে হলো, ওই হাত নাড়াটুকুই যেন পৃথিবীর সব ভালোবাসা একসঙ্গে বলে দিচ্ছে।

প্রথম রাতের নিঃসঙ্গতা

অভিজিতের বিমান আকাশে উড়ে যেতেই বাড়ি হয়ে গেল শুনশান। প্রথমবারের মতো অনামিকা অনুভব করল নিঃসঙ্গতার তীব্রতা।
রাতে বিছানায় শুয়ে মনে হলো, পাশের বালিশটা শূন্য। কতটা ফাঁকা হতে পারে এক সংসার, সেদিনই বুঝল সে।

biroher chithi 2

চোখের জলে বালিশ ভিজে উঠল। একসময় ঘুম এল, কিন্তু ঘুমের ভেতরেও কেবল অভিজিতের মুখ ভেসে উঠছিল।

অভিজিতের চিঠি

বিদেশে পৌঁছানোর দ্বিতীয় দিনেই ডাকপিয়ন এলো। চিঠি খামে বড় হরফে লেখা—“আমার অনামিকার জন্য”

চিঠি খুলতেই অনামিকার বুক কেঁপে উঠল—

*“প্রিয়তমা,
বিমান যখন মাটি ছেড়ে উড়ল, তখন মনে হলো তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না, বরং তোমাকেই নিয়ে যাচ্ছি ভেতরে ভেতরে। জানালার বাইরের আকাশ যতই অপরিচিত হোক, মনে হচ্ছিল তোমার চোখের গভীরতায় তাকিয়ে আছি।

তুমি জানো, আমি শক্ত মানুষ নই। তোমার চোখের জল দেখে বুকটা ফেটে গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলাম—এই বিরহ একদিন শেষ হবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আমি প্রতিটি মুহূর্ত গুনব।

তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ, অথচ তোমার জন্যই এই কঠিন পথে হাঁটছি। বিশ্বাস রেখো, দূরত্ব যতই হোক, ভালোবাসা কখনো কমবে না।

চিরদিনের,
অভিজিত।”*

অনামিকা চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরল। অশ্রু গড়িয়ে পড়ল, কিন্তু সেই অশ্রুতেই মিশে ছিল এক অদ্ভুত শক্তি, এক অব্যক্ত আশা।

অপেক্ষার আলো

দিন, মাস, ঋতু গড়িয়ে চলল। দূরদেশের কর্মব্যস্ততা আর বাংলার আঙিনায় নিঃসঙ্গতা—দুটো ভিন্ন জগত, অথচ এক সুতোয় বাঁধা।

biroher chithi 3

অনামিকা প্রতিদিন সকালে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাত। দূরের ওই আকাশেই যেন অভিজিতকে খুঁজত সে। চিঠি আসার দিনগুলোতে বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত উত্তেজনা জমত। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর হয়ে উঠত জীবনের খাদ্য।

অন্যদিকে অভিজিতও প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ডায়েরি, চিঠি লিখত, মনের গভীরতম কথা জমিয়ে রাখত স্ত্রীর জন্য। রাতের আকাশে চাঁদ উঠলে সে ভাবত—এই চাঁদটাই তো অনামিকাও দেখছে এখন। কত দূরত্ব সত্ত্বেও মনের যোগাযোগটা যেন আরও গভীর হয়ে উঠছিল।

সময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসা হয়ে গেল এক ভিন্ন রূপকথা—
যেখানে কাছে থাকা মানেই নয়, দূরে থেকেও মনের বাঁধন শক্ত হতে পারে।

একদিন নিশ্চয়ই অভিজিত ফিরে আসবে, আর সেই ফিরে আসার দিনটা হবে তাদের নতুন জীবনের সূচনা।
কিন্তু ততদিন এই বিরহই তাদের ভালোবাসার পরীক্ষা, আর চিঠিই তাদের সংসারের প্রাণ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *