দাদুর ডিজিটাল দুনিয়া

দাদুর ডিজিটাল দুনিয়া

দাদুর হঠাৎ ‘স্মার্ট’ হওয়ার নেশা

দাদু রঞ্জনের জীবন ছিল শান্ত এবং নিয়মিত। প্রতিদিন সকালে সাতটার সময় ঘুম থেকে উঠা, চা বানানো, পত্রিকা দেখা আর ছোট্ট বাগানটি সামলানো—এটাই ছিল তার দিনের শুরু। দাদুর জীবন ছিল এমন, যেন একটিমাত্র রুটিন ভাঙা যথেষ্ট বড় অজানা হয়ে উঠত।

কিন্তু একদিন সকালে নাতি অরুণ রঞ্জনের হাতে মোবাইল ধরিয়ে বলল,
“দাদু, দেখুন, আমি নতুন রিল বানিয়েছি!”

দাদু প্রথমে আশ্চর্য হয়ে মোবাইলটি নিলেন। স্ক্রিনে নাচ, হাসি আর ফিল্টার—সব মিলিয়ে এক অন্য জগৎ! দাদুর চোখ বড় হয়ে গেল, যেন কেউ হঠাৎ করে নতুন রাজ্যের দরজা খুলে দেখিয়েছে।

“এটা কি! আমি কি এই জগতে কিছুই জানতাম না?”—দাদু ভাবলেন।
অরুণ মুখে হাসি নিয়ে বলল, “দাদু, আপনি চাইলে আমাদের সঙ্গে সব শিখতে পারেন। ডিজিটাল হতে তো দেরি নেই।”

দাদুর মন হঠাৎ ঝড়ের মতো জ্বলে উঠল। তিনি ঠিক করলেন, আজ থেকেই তিনি হবেন ডিজিটাল মাস্টার। আর সেই সঙ্গে, পরিবারের সবাই যেন জানে—রঞ্জন দাদু এখন নতুন যুগের সাথে তাল মিলাচ্ছেন।

পরিবার প্রথমে হতবাক। মা পকেটে হাত রেখে বললেন,
“রঞ্জন, তুমি কি আবার নতুন কোন নেশায় পড়েছ? তোমার বয়স কি এখন এই সব ফোন-ভিডিওর?”

দাদু মাথা নাড়লেন, “না মা, এটা শুধু নেশা নয়। এটা হলো নতুন অভিজ্ঞতা! আজ থেকে আমি সবাইকে দেখাবো—দাদু ডিজিটাল দাদু।”

dadur digital haoya 1

নাতি-নাতনিরা খুশিতে চিৎকার করল। বাবাও হেসে বললেন,
“দেখি, রঞ্জন দাদু কোন দিক দিয়ে আমাদের হাসায়।”

পরের দিন থেকেই দাদু মোবাইল হাতে ধরে রাখলেন। প্রতিদিন সকালে সকালে নাতি অরুণকে ঘিরে বসে নতুন নতুন অ্যাপ, রিল, ভিডিও—সবই শিখতে শুরু করলেন। প্রথম পদক্ষেপে দাদুর অভিজ্ঞতা শূন্য, কিন্তু উৎসাহ সীমাহীন।

একদিন তিনি বললেন,
“আমি শিখতে শিখতে পারব না, তবে চেষ্টা করলেই হবে। আর চেষ্টা করতে হবে। ডিজিটাল দাদুর যাত্রা শুরু হলো।”

পরিবার হাসি-আনন্দে ভরে উঠল। সবাই জানে, এই নেশা যতই হাস্যকর হবে, তা তাদের জীবনে নতুন রঙ, নতুন আনন্দ ও হাসির খোরাক যোগ করবে।

দাদুর ‘স্মার্ট’ হওয়ার নেশা ঠিক যেন পরিবারের শান্ত, নীরব জীবনকে এক মুহূর্তে রঙিন করে দিল। আর সেই রঙিন দিনগুলোর শুরু—এই অধ্যায়ের আনন্দময় প্রেরণা।

অনলাইন শপিংয়ের হাস্যকর বিপত্তি

দাদু রঞ্জন যখন প্রথমবার অনলাইন শপিং শুরু করলেন, পুরো পরিবার দেখল এক নতুন ধরনের উৎসাহ। মোবাইলে একটি জুতো দেখলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার দিয়ে দিলেন। “দেখুন মা, কত ট্রেন্ডি জুতো! এটা আমার জন্যই ঠিক!”

কিন্তু যখন প্যাকেজ খোলা হলো, সবাই অবাক—জুতোটি ছবি থেকে একেবারে ভিন্ন রঙের। কমলা, সবুজ, নীল—সব রঙ একসাথে! দাদু কিন্তু গম্ভীর চেহারায় বললেন,
“এটা নতুন ফ্যাশন, সবাই এখনও বুঝতে পারছে না।”

নাতি অরুণ হাসতে হাসতে বলল, “দাদু, আপনি কি এই জুতো পরে হাঁটবেন? রাস্তার মানুষ দেখলে তারা হেসে ফেলবে!”
দাদু মাথা নাড়লেন, “হেসুক, হেসুক! ডিজিটাল দাদু তো ট্রেন্ডসেটার।”

পরের দিন দাদু সেই জুতো পড়ে বাজারে গিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। প্রতিটি পদক্ষেপে ঘরে হাসির ঢেউ উঠল। প্রতিবেশীরা এসে বললেন,
“দেখুন, রঞ্জন দাদু আজ কোন রঙে বেরিয়েছেন!”
দাদু গর্বে বুক ফুলিয়ে বললেন,
“এটাই আমার নতুন স্টাইল। মনে হয় না কি, সবাই এখন আমার ফ্যান।”

এরপর দাদু আরও অনলাইন ক্রয় শুরু করলেন—চশমা, মোবাইল কভার, জামা, এমনকি রান্নাঘরের কিছু নতুন জিনিস। প্রতিটি অর্ডার নতুন বিপত্তি নিয়ে আসত। একবার তিনি নতুন চশমা কিনলেন, কিন্তু সেটি পুরোপুরি উল্টোদিক—চশমা পরে যেন তিনি চোখের চশমা খুঁজছেন!

মা বললেন, “রঞ্জন, তুমি কি এখনই নতুন অভিজ্ঞতা নিতে শুরু করেছ?”
দাদু গম্ভীর চেহারায় বললেন, “মা, অভিজ্ঞতা কখনও শেষ হয় না। আমি তো ডিজিটাল দাদু!”

পরিবার হাসির ছটায় কেঁপে উঠল। প্রতিটি ভুল, প্রতিটি বিপত্তি—সবাইকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলল। বাড়িতে এক নতুন রঙের হাওয়া বইতে শুরু করল।

একদিন দাদু নাতি অরুণকে বললেন,
“দেখছ, আমি যদি অনলাইন শপিং না করতাম, আমাদের হাসির এত বড় উৎস কোথা থেকে আসত?”
অরুণ হেসে বলল, “দাদু, আপনার জন্য আমাদের বাড়ি এখন এক মজা, আর আপনার প্রতিটি ক্রয়ই নতুন হাসির কারণ।”

দাদুর এই হাস্যকর শপিং অভিযান শুধু হাসি নিয়ে আসল না, পরিবারের সকলে একসাথে সময় কাটানোর নতুন উপায়ও পেয়ে গেল। প্রতিটি নতুন অর্ডারের সঙ্গে নতুন গল্প, নতুন বিপত্তি, আর নতুন আনন্দ।

এভাবেই দাদু রঞ্জনের ডিজিটাল নেশা বাড়ি ভরিয়ে তুলল হাসি ও আনন্দে।

রিল বানানোর বিপদ

দাদু রঞ্জনের “ডিজিটাল মাস্টার” হওয়ার নেশা এখন নতুন পর্যায়ে পৌঁছালো—রিল বানানো! মোবাইল হাতে নিয়ে তিনি ভাবলেন, “এবার দেখাবো, দাদু শুধু শপিং নয়, ভিডিওতেও মাস্টার।”

প্রথম রিলের আইডিয়াটি ছিল সোজা—বাগানে হেঁটে হেঁটে ফুল দেখানো। কিন্তু দাদুর অভিজ্ঞতা শূন্য। মোবাইলটি ধরে ধরার ভুলে, ভিডিওটি পুরোপুরি উল্টোদিক হয়ে গেল। দাদুর মাথা নীচে, পা উপরে—ভিডিওটি দেখে নাতি-নাতনিরা চিৎকার করে হেসে কেঁপে উঠল।

এরপর দাদু চায়ের কাপ হাতে নাচ শুরু করলেন। বিছানার চাদর, বালিশ, আর রুমের টেবিল—সবই ভিডিওর অংশ। তিনি চেষ্টা করলেন ফিল্টার ব্যবহার করতে, কিন্তু ফিল্টার চালু করার সময় চশমা মাটিতে পড়ে গেল। চশমা খুঁজতে খুঁজতে দাদু এমনভাবে ঘুরে ঘুরে দাঁড়ালেন, যেন পুরো ঘরেই তাঁকে খুঁজছে কেউ।

মা এসে বললেন, “রঞ্জন, তুমি কি একটু সহজভাবে চেষ্টা করতে পারবে না? না হলে পুরো ঘরই কেঁপে উঠবে তোমার ভিডিও দেখে।”
দাদু গম্ভীর চেহারায় উত্তর দিলেন, “মা, ডিজিটাল দাদু শুধু সহজ পথ নেয় না। নতুন চ্যালেঞ্জই আমাদের জীবনের আসল মজা।”

নাতি-নাতনিরা মোবাইল হাতে ভিডিও রেকর্ড করতে লাগল। একেকটি ক্লিপে দাদুর বড় চোখ, উল্টো চুল, এবং হাস্যকর নাচ—সব মিলিয়ে হাসির ঢেউ। প্রতিবেশীরা যখন ভিডিও দেখল, তারা এসে বলল,
“দেখুন, রঞ্জন দাদু কি করে হাসি ফেলে দিচ্ছেন!”

দাদু প্রতিটি ভুলকে নিজের স্টাইল বানিয়ে নিলেন। তিনি নাচতে নাচতে বললেন, “হ্যাঁ, এই ভুলগুলোই তো আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা!”
পরিবারের সবাই একসাথে হেসে ফেলল। হাসির শব্দ ঘরে ভরল, আর দাদুর রিল বানানোর বিপত্তি হয়ে উঠল সকলের নতুন আনন্দের উৎস।

দাদু বুঝতে পারলেন, প্রযুক্তি শুধু নতুন কিছু শেখায় না, বরং পরিবারকে একত্রিত করার মজাও দেয়। প্রতিটি ব্যর্থ ভিডিও, প্রতিটি হাস্যকর মুহূর্ত—সবই এখন পরিবারের আনন্দের অংশ।

রঞ্জন দাদুর রিল বানানোর নেশা বাড়তেই থাকল। আর পুরো পরিবারও মানে হাসি আর মজার সঙ্গে মিশে এক নতুন জীবনের রঙ পেতে লাগল।

পারিবারিক আনন্দে ডিজিটাল দাদু

দাদু রঞ্জনের ডিজিটাল নেশা এখন পুরো পরিবারের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকালে তিনি মোবাইল হাতে বসে নতুন রিল বানাতে শুরু করলেন। কখনও বাগানের ফুলের পাশে, কখনও রান্নাঘরে চায়ের কাপ হাতে, কখনও ঘরের বিছানায়—প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিওর জন্য যেন তৈরি।

নাতি-নাতনিরা মোবাইল হাতে নিয়ে দাদুর কাজ দেখত এবং প্রতিটি ভুলে হাসি থামাত না। একবার দাদু রিল বানাতে গিয়ে চশমা উল্টোদিক পরে ফেললেন, আর ভিডিওতে দেখা গেল দাদু যেন চোখ বড়, নাক ছোট আর মুখে অদ্ভুত হাসি—পরিবার হেসে হেসে কেঁপে উঠল।

মা বললেন,
“রঞ্জন, তুমি কি আমাদের বাড়ির শান্তি নষ্ট করতে চাও? এই ভিডিওগুলো দেখে তো আমরা খাওয়া-দাওয়াও ভুলে যাচ্ছি।”
দাদু গম্ভীর চেহারায় বললেন,
“না মা, শান্তি তো সবসময় থাকে। হাসি এবং আনন্দ এসেছে, এটিই আসল শান্তি।”

পরিবার এখন প্রতিদিনের নতুন অভিজ্ঞতায় মেতে উঠল। সকালের চা এখন দাদুর নতুন ভিডিও দেখার সঙ্গে শুরু হয়। দুপুরের খাবারে সবাই হেসে হেসে গল্প বলে। রাতের গল্পের সময় দাদু নতুন ভিডিও দেখায়, আর সবার মুখে হাসি অচল।

প্রতিটি অর্ডার, প্রতিটি রিল—সবই পরিবারকে একত্রিত করেছে। অনলাইন শপিং-এর বিপত্তি থেকে শুরু করে ভিডিও বানানোর ভুল—সবই এখন সুখের অংশ।

একদিন দাদু নাতি অরুণকে বললেন,
“দেখছ, আমি যদি এই ডিজিটাল জগতে না ঢুকতাম, আমাদের এত আনন্দ কোথা থেকে আসত?”
অরুণ হাসতে হাসতে বলল,
“দাদু, আপনার জন্য আমাদের বাড়ি এখন এক বিশাল হাসির খোরাক। প্রতিটি মুহূর্ত এখন মজার গল্প।”

দাদুর হাস্যরসাত্মক নেশা শুধু নিজেকে মজার করেছে না, পুরো পরিবারের সম্পর্ককেও আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। প্রতিটি ভুল, প্রতিটি বিপত্তি—সবই যেন নতুন আনন্দের সিঁড়ি।

এইভাবে দাদু রঞ্জনের ডিজিটাল অভিযানে পরিবারের দিনগুলো হয়ে উঠল রঙিন, হাসিমুখে ভরা এবং একদম নতুন ধরনের আনন্দের।

দাদুর ডিজিটাল পরিসমাপ্তি

সময় এগোতেই দাদু রঞ্জনের “ডিজিটাল দাদু” খ্যাতি পুরো পরিবারে ছড়িয়ে পড়ল। প্রতিটি নতুন ভিডিও, প্রতিটি নতুন ক্রয়—সবই হাস্যরস এবং আনন্দের উৎস হয়ে উঠল।

দাদু বুঝতে পারলেন, প্রযুক্তি শুধু নতুন জিনিস শেখায় না, বরং পরিবারকে একত্রিত করার মজা দেয়। প্রতিটি ভুল, প্রতিটি হাস্যকর মুহূর্ত—সবই এখন পরিবারের প্রিয় গল্প।

একদিন সকালের চায়ের সময় দাদু দাঁড়িয়ে বললেন,
“আমি ডিজিটাল দাদু। আমার এই ছোট ছোট বিপত্তি, ভুল, এবং মজার মুহূর্তগুলোই আমাদের জীবনের আনন্দ বাড়াবে।”

dadur digital haoya 2

মা হাসি দিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ রঞ্জন, সত্যিই। তুমি আমাদের জীবনে নতুন রঙ নিয়ে এলেন।”

নাতি-নাতনিরা বলল,
“দাদু, আপনার ভিডিও দেখে আমরা সব স্ট্রেস ভুলে যাই। প্রতিদিন এখন আরও মজা!”

পরিবারের সবাই একসাথে বসে দাদুর ভিডিও দেখে হেসে উঠল। হাসির শব্দ ঘরে ভরে গেল। দাদু নিজের ভুলগুলোকে মজা হিসেবে গ্রহণ করে, পরিবারের সবাইকে আনন্দিত করে চললেন।

শেষে রঞ্জন দাদু বুঝলেন, যে কোনো নতুন প্রযুক্তি বা নেশা—যদি পরিবারের সঙ্গে ভাগ করা হয়, তবে তা শুধু হাসি এবং আনন্দই দেয়। প্রতিটি ছোটো বিপত্তি, প্রতিটি হাস্যকর ঘটনা—সবই মিলিয়ে তৈরি হলো পরিবারের নতুন রঙিন দিন, যেখানে হাসি আর ভালোবাসার অভাব নেই।

এভাবেই দাদুর ডিজিটাল নেশা পুরো পরিবারকে আনন্দ এবং হাসির এক নতুন জগতে নিয়ে গেল। আর দাদুর হাসি এখন শুধু তার নয়, পুরো পরিবারের সুখের প্রতীক।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *