“যে প্রেম ফিরল না”
“ভালোবাসা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্বে বোনা এক হৃদয়স্পর্শী প্রেমকাহিনী”
প্রথম দেখা
শহরের শীত তখন আস্তে আস্তে নিজের চাদর মুড়িয়ে নামছে রাস্তায়। সূর্যাস্তের লালচে আলো জানালার কাচে প্রতিফলিত হয়ে রাস্তার ভিড়ের উপর এক অন্যরকম রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছিল। কলকাতার ব্যস্ত গড়িয়াহাট মোড়ের কাছেই ছোট্ট, নিরিবিলি এক কফিশপ — ক্যাফে অরেঞ্জ।
রোহান আজ এখানে এসেছে কিছু ছবি তুলতে।
সে পেশায় ফটোগ্রাফার হলেও তার আসল পরিচয় একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। মানুষের মুখ, আলো-ছায়া, আর প্রেমের মুহূর্তের গল্প — এই তিনেই তার পৃথিবী গড়ে উঠেছে। সেদিনও সে ক্যামেরা হাতে জানালার পাশের টেবিলে বসে ছিল, কফির ধোঁয়া আর বাইরের গোধূলি মিশিয়ে কিছু ফ্রেম বন্দি করছিল।
ঠিক তখনই দরজার ঘণ্টা টিং টিং শব্দে বেজে উঠল। ভেতরে এল এক মেয়ে — লম্বা চুল, সাদামাটা সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে ল্যাপটপ ব্যাগ। মেয়েটির চোখে ছিল এক ধরনের তাড়াহুড়ো, যেন কোনো ডেডলাইনের দৌড়ে সে নিঃশ্বাস ফেলতেও ভুলে গেছে। সে পাশের টেবিলে বসে ল্যাপটপ খুলে টাইপ করতে শুরু করল।
রোহানের নজর প্রথমে তার দিকে যায়নি। কিন্তু একসময় কফিশপের দরজার ফাঁক দিয়ে ঢোকা হালকা শীতের হাওয়া মেয়েটির চুল উড়িয়ে তার মুখ ঢেকে দিল। সে বিরক্ত হয়ে চুল সরাল, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই রোহানের চোখ তার মুখের দিকে আটকে গেল।
চোখে যেন ক্লান্তি আর দৃঢ়তার এক অদ্ভুত মিশেল — যা রোহান আগে কোনো ফ্রেমে দেখেনি।
সে না ভেবেই ক্যামেরা তুলল এবং ক্লিক করে দিল।
ফ্রেমে ধরা পড়ল সোনালি আলো, চুলে খেলা করা বাতাস, আর এক অপরিচিত মুখের রহস্যময় সৌন্দর্য।
মেয়েটি টের পেল, চোখ তুলে তাকাল।
“আপনি কি আমার ছবি তুললেন?” — তার কণ্ঠে ছিল অবাক হওয়া আর সামান্য বিরক্তি।
রোহান হেসে বলল,
“দুঃখিত, দৃশ্যটা এত সুন্দর ছিল যে… ক্যামেরা নামাতে পারিনি। চাইলে ডিলিট করে দেব।”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর হালকা হাসল —
“থাক, ডিলিট করতে হবে না। তবে শর্ত আছে — ছবিটা আমাকেও পাঠাতে হবে।”
রোহান হাত বাড়িয়ে বলল,
“রোহান। পেশায় ফটোগ্রাফার।”
মেয়েটি হাত মিলিয়ে বলল,
“অনন্যা। পেশায় কর্পোরেট দৌড়বিদ।”
শীতের সেই বিকেলে, গরম কফির কাপে ধোঁয়া ওঠার সাথে সাথে শুরু হল এমন এক প্রেমের গল্পের প্রথম পাতা, যা কেউই তখন কল্পনাও করতে পারেনি।
ভালোবাসার সূচনা
পরিচয়ের পরদিনই রোহান অনন্যাকে সেই ছবি পাঠাল। ছবিটা পেয়ে অনন্যা প্রথমে অবাক হল — কেমন করে এক অচেনা মানুষ তার ক্লান্ত চোখের ভেতর লুকিয়ে থাকা গল্পটা এত নিখুঁতভাবে বন্দি করতে পারে? ছবিটা দেখে মনে হল, যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করল সে।
তারপর থেকে দু’জনের মধ্যে অদ্ভুত এক যোগাযোগ শুরু হল।
প্রথমে শুধু ছবি আর মেসেজের বিনিময় —
“আজ এই রঙটা দেখেই তোমার কথা মনে পড়ল”
“এটা কোথায় তুলেছ?”
ধীরে ধীরে সেই কথাবার্তা ফোনে গিয়ে পৌঁছাল, আর ফোনের লম্বা রাতগুলোতে মিলল হাসি, প্রেমের গল্প আর অদ্ভুত এক আরাম।
এক রবিবার সকালে রোহান প্রস্তাব দিল,
“আজ যদি সময় পাও, চল শহরের গলিপথে হেঁটে বেড়াই। আমার লেন্সে তোমাকে দেখি।”
অনন্যা প্রথমে না করলেও পরে রাজি হল।
দু’জন শহরের পুরনো এলাকায় গেল — শ্যামবাজারের গলি, কলেজ স্ট্রিটের বইয়ের গন্ধ, আর গঙ্গার ধারে সূর্যাস্ত।
রোহান ক্যামেরায় শুধু ছবি তুলছিল না, তুলছিল প্রেমের মুহূর্ত।
অনন্যা বুঝতে পারল, রোহানের চোখে সে শুধুই একজন মেয়ে নয় — সে এক গল্প, এক প্রেমের অনুভূতি, এক চিত্রকাব্য।
তাদের দেখা হতে হতে, গল্প জমতে জমতে, একসময় অনন্যা খেয়াল করল — রোহানের সরলতা আর কোমল স্বভাব তার ব্যস্ত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী জীবনে এক শান্তির নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে।
সে হাসতে শিখল, ক্লান্তি ভুলতে শিখল, আর বুঝতে পারল, জীবনে শুধু সাফল্য নয়, হৃদয়ের জন্যও কিছু জায়গা রাখতে হয়।
একদিন গঙ্গার ধারে বসে রোহান বলল,
“জানো, অনন্যা… আমি কোনোদিনও চাইনি কাউকে শুধু আমার জন্য বদলাতে। কিন্তু তুমি যেভাবে আমার ছবিতে প্রাণ এনে দাও, মনে হয় তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।”
অনন্যা কিছু বলল না। শুধু হালকা হেসে বলল,
“আর তুমি জানো, রোহান… অনেকদিন পর আমি নিজের জন্য হাসতে শিখেছি।”
সেদিন সন্ধ্যার আকাশে গোধূলির রঙ যেন তাদের প্রেমের সম্পর্কের মতোই ছিল — নরম, উষ্ণ, আর অদ্ভুতভাবে সুন্দর।
পরকীয়ার ছায়া
সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল। রোহান আর অনন্যার দেখা এখন নিয়মিত — কখনও বিকেলের কফি, কখনও শহরের কোনো নির্জন গলি, কখনও হঠাৎ ফোনে রাতভর প্রেমের গল্প।
তাদের সম্পর্কের মধ্যে উষ্ণতা ছিল, কিন্তু অনন্যার জীবনে একটি নীরব চাপ ক্রমশ বেড়ে চলছিল — তার অফিস।
অনন্যা কাজ করত একটি বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানিতে, যেখানে প্রতিটি দিন ছিল যেন এক দৌড়।
সেই দৌড়ে একদিন তার জীবনে প্রবেশ করল অর্ণব সেন — অনন্যার নতুন প্রজেক্ট হেড। বয়সে কিছুটা বড়, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, আর মুখে একরাশ অভিজ্ঞতার ছাপ। অফিসে অর্ণবের প্রভাব, নেতৃত্ব আর ঝলমলে জীবনযাপন অনেকের কাছেই ঈর্ষার কারণ ছিল।
প্রথমে অর্ণবের সঙ্গে অনন্যার সম্পর্ক ছিল কেবল কাজের।
কিন্তু ধীরে ধীরে, লাঞ্চ মিটিং, অফিস-পরবর্তী আলোচনা, এবং বড় বড় প্রজেক্টের পরিকল্পনার ফাঁকে তাদের কথাবার্তা ব্যক্তিগত দিকে গড়াল। অর্ণব সবসময় অনন্যাকে উৎসাহ দিত —
“তুমি আরও বড় জায়গায় যেতে পারবে, অনন্যা। এই শহর তোমার জন্য ছোট। বিদেশে কাজ করা উচিত তোমার।”
অর্ণবের এই উচ্চাভিলাষী ভাবনা অনন্যার মনের গভীরে ঢুকে পড়ল।
সে একসময় রোহানের স্বপ্নময় কথাগুলো আর অর্ণবের বিলাসী বাস্তবতার মধ্যে তুলনা করতে শুরু করল।
রোহান তাকে ভালোবাসত, কিন্তু সে দিতে পারত শুধু সরল জীবন; অর্ণব দিতে পারত সাফল্য, প্রভাব, আর সেই বড় মাপের পৃথিবী, যা অনন্যা সবসময় কল্পনা করত।
এক সন্ধ্যায়, প্রজেক্টের কাজে অর্ণব অনন্যাকে নিয়ে গেল একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়।
সেখানে, সোনালি আলো আর মৃদু সুরের মাঝে, অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি জানো, অনন্যা… জীবনে যদি সত্যি উঁচুতে উঠতে চাও, তবে সাহস করে কিছু প্রেমের সম্পর্ক পেছনে ফেলতে হয়। সবসময় প্রেম ভালোবাসা দিয়ে পেট ভরে না।”
অনন্যা চুপ করে রইল, কিন্তু তার মন অদ্ভুতভাবে অশান্ত হয়ে উঠল।
সেদিন বাড়িতে ফিরে রোহানের ফোন পেলেও, সে তেমন কথা বলল না। রোহান টের পেল, অনন্যার কণ্ঠে যেন দূরত্বের পর্দা নেমে এসেছে।
তারপর থেকে ধীরে ধীরে অনন্যার দেখা কমে গেল, মেসেজের উত্তর আসতে দেরি হতে লাগল।
রোহান বুঝতে পারছিল, তাদের প্রেমের সম্পর্কের আকাশে এক অদৃশ্য মেঘ জমছে — সেই মেঘের নাম পরকীয়ার ছায়া।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা বনাম প্রেম
অর্ণবের প্রভাব আর প্রস্তাব ধীরে ধীরে অনন্যার জীবনে এক অদ্ভুত মোড় নিয়ে এল।
একদিন অফিসে হঠাৎ ঘোষণা এল — আন্তর্জাতিক শাখায় একটি বড় প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে, আর সেই টিমের নেতৃত্বের জন্য অনন্যার নাম প্রস্তাব করেছে অর্ণব নিজে।
শর্ত ছিল স্পষ্ট — ছয় মাসের জন্য বিদেশে থাকতে হবে।
খবরটা শুনে অনন্যার বুক কেঁপে উঠল।
এটি ছিল তার বহুদিনের স্বপ্ন — বিদেশে কাজ করার সুযোগ, ক্যারিয়ারে বিশাল অগ্রগতি।
কিন্তু মনে হল, যেন স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গে রোহানকে হারানোর সম্ভাবনাও সামনে এসে দাঁড়াল।
সেদিন সন্ধ্যায় সে রোহানের সঙ্গে দেখা করল। গঙ্গার ধারে বসে অনন্যা ধীরে ধীরে সব বলল।
রোহান প্রথমে চুপ করে শুনল, তারপর মৃদু স্বরে বলল,
“তুমি জানো, অনন্যা… আমি সবসময় চাই তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। কিন্তু এই ছয় মাস আমাদের অনেক কিছু বদলে দেবে। আমি জানি না, বদলটা ভালো হবে নাকি খারাপ।”
অনন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“রোহান, এটা আমার জন্য এক জীবনের সুযোগ। আমি জানি, তোমার সঙ্গে এই সময় না কাটালে হয়তো কিছু হারাবো… কিন্তু যদি এই সুযোগ ছেড়ে দিই, নিজেকেই হারিয়ে ফেলব।”
রোহান তাকিয়ে রইল তার চোখে — সেখানে প্রেম ভালোবাসা ছিল, কিন্তু একইসঙ্গে উচ্চাকাঙ্ক্ষার কঠিন দীপ্তিও।
সে জানত, অনন্যা এই সিদ্ধান্তে একধাপ এগোলেই তাদের প্রেমের সম্পর্কের দিকচিহ্ন বদলে যাবে।
পরবর্তী দিনগুলোতে রোহান দেখল, অনন্যা প্রস্তুতি নিচ্ছে — পাসপোর্ট, ভিসা, নতুন পোশাক, আর অর্ণবের সঙ্গে বারবার মিটিং।
রোহানের মনে ক্ষত তৈরি হল, কিন্তু সে বাধা দিল না।
তার বিশ্বাস ছিল, ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তবে দূরত্ব তাকে ভাঙতে পারবে না।

বিদায়ের দিন এলো। বিমানবন্দরে ভিড়ের মাঝে অনন্যা রোহানকে জড়িয়ে ধরল।
“আমাকে ভুলে যেও না, প্লিজ,” সে ফিসফিস করল।
রোহান শুধু বলল,
“তুমি ফিরলে আমি এখানেই থাকব, ক্যামেরা হাতে, তোমার জন্য নতুন ফ্রেম খুঁজে।”
কিন্তু সেই মুহূর্তে রোহানের অন্তরে এক আশঙ্কা দানা বাঁধল — হয়তো এই অপেক্ষা আর আগের মতো সহজ হবে না।
কারণ, প্রেম ভালোবাসার পথে এখন দাঁড়িয়ে গেছে উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রাচীর।
বিরহের কষ্ট
অনন্যা বিদেশে পা দেওয়ার পর থেকেই রোহানের জীবনে যেন এক দীর্ঘ শূন্যতার অধ্যায় শুরু হল।
যে মেয়ে প্রতিদিন ফোন করত, এখন সপ্তাহে একবারও যোগাযোগ করে না ঠিকমতো।
টাইমজোনের পার্থক্য, অফিসের চাপ, নতুন পরিবেশ — সব মিলিয়ে অনন্যা যেন এক নতুন দুনিয়ায় ঢুকে গেল, যেখানে রোহানের জায়গা খুবই ছোট।
প্রথম ক’দিন রোহান নিজেকে বোঝাল, “এটাই স্বাভাবিক। ও ব্যস্ত, কাজের চাপ আছে।”
কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ব্যস্ততা যেন অজুহাতে পরিণত হল।
ফোন ধরলেও অনন্যার কণ্ঠে আর সেই উষ্ণতা নেই।
বারবার কথা বলতে গিয়ে সে বলত,
“রোহান, আমি এখন মিটিংয়ে আছি… পরে কথা বলব।”
অথবা
“আজ খুব ক্লান্ত… কাল কথা বলি।”
রোহান চেষ্টা করত নিজের জীবন ব্যস্ত রাখতে — ফটোগ্রাফির নতুন প্রজেক্ট, শহরের গলি ঘুরে ছবি তোলা, আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।
তবু রাতের বেলা একা ঘরে ফেরার পর সে অনুভব করত, তার ভেতরে এক অদৃশ্য ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে।
এক রাতে, হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি চোখে পড়ল — অনন্যা, অর্ণব এবং আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে এক বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয়।
ছবিতে অনন্যার হাসি ছিল উজ্জ্বল, কিন্তু সেই হাসি যেন রোহানের জন্য নয়।
মনে হল, তাদের মাঝে সমুদ্রের মতো দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে — শুধু ভৌগোলিক নয়, হৃদয়েরও।
পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে কথাবার্তা আরও কমে গেল।
কখনও পুরো সপ্তাহ কেটে যেত, একবারও কথা না বলে।
রোহান অপেক্ষা করত, ফোনের রিংটোন শোনার জন্য; কিন্তু সেই অপেক্ষা যেন ধীরে ধীরে তার ভিতরকে ক্ষয় করছিল।
সে বুঝতে পারল —
ভালোবাসা শুধু দূরত্বে হারায় না, হারায় যখন একজন মানুষ অন্যজনকে নিজের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়।
আর অনন্যা হয়তো সেটাই করছে, ধীরে ধীরে, অজান্তে।
পরিণয়
বিদেশে অনন্যার প্রজেক্ট শেষ হতে ছয় মাসের বদলে লেগে গেল পুরো এক বছর।
ফিরে আসার খবরটা রোহান জানল হঠাৎ, এক পুরনো বন্ধুর মাধ্যমে।
কোনো ফোন, কোনো মেসেজ— কিছুই আসেনি অনন্যার কাছ থেকে।
এক শীতের সন্ধ্যায়, রোহান তার বহু প্রতীক্ষিত ফটো প্রদর্শনী করছিল শহরের একটি আর্ট গ্যালারিতে।
বছরের পর বছর ধরে তোলা ছবির মাঝে, একটি কোণে রাখা ছিল একটি বিশেষ ফ্রেম— গঙ্গার ধারে দাঁড়ানো অনন্যা, বাতাসে উড়ছে চুল, চোখে সেই প্রথম দেখা দিনের রহস্যময়তা।
রোহান সবসময় ছবিটাকে নিজের সেরা কাজ বলে মনে করত, আর মনে মনে সেটাকেই নিজের প্রেম ভালোবাসার প্রতীক ভাবত।
প্রদর্শনীর ভিড়ের মাঝে হঠাৎ পিছন থেকে এক পরিচিত কণ্ঠ—
“তুমি এখনো ওই ছবি রেখেছ?”
রোহান ঘুরে দেখল— অনন্যা।
চুল কিছুটা ছোট হয়েছে, চোখে ক্লান্তি, কিন্তু সেই পরিচিত হাসি এখনো আছে।
তার হাতে একটি খাম— সুন্দরভাবে সাজানো একটি বিয়ের আমন্ত্রণপত্র।
“আমি ভেবেছিলাম… তোমাকে না বলে পারব না। হয়তো আমরা একসাথে থাকার জন্য জন্মাইনি, রোহান। কিন্তু তুমি… তুমি ছিলে আমার জীবনের সবচেয়ে সত্যিকারের প্রেম।”
রোহান কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
তারপর মৃদু হেসে বলল—
“ভালো থেকো, অনন্যা। তুমি তোমার স্বপ্ন বেছে নিয়েছ… আমি আমার স্মৃতি।”
অনন্যা ধীরে ধীরে ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল।
রোহান তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে—
মনে হল, ভালোবাসা হারায়নি, শুধু রূপ বদলেছে।
এখন তা এক চিরন্তন ফ্রেমে বন্দি, যেখানে সময়ও আর হাত দিতে পারবে না।
এভাবেই শেষ হল রোহান ও অনন্যার গল্প—
এক প্রেম যা শুরু হয়েছিল আকস্মিকভাবে,
পেরিয়েছিল স্বপ্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দূরত্ব ও ব্যথা,
কিন্তু শেষ অবধি ঠাঁই নিয়েছে স্মৃতির অ্যালবামে।