রাখির বাঁধন
| |

“রাখির বাঁধন: দিদি আর ভাইয়ের গল্প”

নতুন অতিথির আগমন

আগস্টের প্রথম সপ্তাহ। আকাশে তখনো বর্ষার মেঘ ভাসছে, কখনো হালকা বৃষ্টি, কখনো রোদ—চারপাশে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা। পুজার বয়স তখন আট বছর, ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বছরের এই সময়টা তার কাছে সবসময়ই বিশেষ—কারণ কয়েক সপ্তাহ পরেই আসবে রাখিবন্ধন।

প্রতি বছরই রাখির দিন পুজার মনে একটা কষ্ট থাকত—তার নিজের কোনো ভাই নেই। মা সবসময় সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন—
“তোর তো মামার ছেলে আছে, ওকেই রাখি পরা।”
মামার ছেলে রণদীপ ভালোই, কিন্তু মনের গোপনে পুজা সবসময় চেয়েছে নিজের রক্তের ভাই, যাকে নিয়ে সারাবছর খুনসুটি করবে, পড়াশোনায় সাহায্য করবে, আবার উৎসবের দিন হাত ধরে রাখি পরাবে।

সেই বছর রাখির ঠিক ১৪ দিন আগে, অর্থাৎ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে, ভোরে বাড়িতে হঠাৎ অস্থিরতা শুরু হল। পুজার মা তখন হাসপাতালে ভর্তি। পুজা কিছুই ঠিকমতো বুঝতে পারছিল না, শুধু বারবার জিজ্ঞেস করছিল—
“মা ঠিক আছে তো?”

দুপুরের একটু আগে বাবা হাসপাতাল থেকে ফোন করলেন—
“পুজা, তোর আরো দায়িত্ব বেড়ে গেল রে।”
পুজা প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না, তারপর বাবার গলায় আনন্দ মেশানো ক্লান্তি শুনে চমকে উঠল—তার ছোট ভাই জন্ম নিয়েছে!

বাবা তাকে বললেন—
“তোর ভাই এসেছে এই পৃথিবীতে। তুই তো এবার নিজের হাতে রাখি পরাতে পারবি।”

পুজার বুকের ভেতর যেন আনন্দে ঢেউ উঠল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দূরের আকাশে তাকিয়ে সে ভাবল—
“এবার রাখির দিনটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন।”

হাসপাতাল থেকে ফেরার পর মা-বাবার মুখে ক্লান্তি থাকলেও চোখে ছিল অশেষ সুখ। ছোট্ট ভাইটিকে পুজা প্রথম যখন কোলে নিল, গোলগাল মুখ, বন্ধ চোখ, নরম হাত—তার মনে হচ্ছিল, এই ছোট্ট মানুষটাই তার পৃথিবীর সবচেয়ে দামি উপহার।

সেদিন থেকেই পুজা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল—
“আমি সবসময় আমার ভাইকে রক্ষা করব, ওর পাশে থাকব, যেভাবেই হোক।”

প্রথম রাখি

ভাইয়ের জন্মের পর কেটে গেছে মাত্র ১৪ দিন। রাখির সকাল—পুজার জন্য এই দিনটা যেন স্বপ্নের মতো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সে প্রথমেই ছোট্ট ভাইটির দিকে তাকাল। নাম রাখা হয়েছে রিক। সারা রাত কেঁদে কেঁদে মাকে জাগিয়ে রাখলেও, আজ যেন অদ্ভুত শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।

পুজা বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠল। রান্নাঘরের এক কোণে বসে নিজের হাতে সাজিয়ে তুলল রাখির থালা—লাল-সোনালি সুতো দিয়ে তৈরি করা ছোট্ট রাখি, মিষ্টির বাটি, ফুলের পাপড়ি আর একটি ছোট্ট প্রদীপ। মায়ের কাছ থেকে শিখে নিয়েছিল সবকিছু, কিন্তু এবার তার ভেতরে যেন দ্বিগুণ উৎসাহ।

মা মৃদু হেসে বললেন—
“দেখ পুজা, ও তো এখনো কিছুই বোঝে না, তবুও তুই ওকে রাখি পরাতে চাইছিস?”

পুজা মায়ের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল—
“মা, বোঝে কি না সেটা আমার কাছে জরুরি নয়। আমি চাই, জীবনের প্রথম রাখি যেন আমার ভাইয়ের হাতে বাঁধা হয়।”

মা কিছু বললেন না, শুধু চোখে মমতা নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে সবাই বসে পড়ল ছোট্ট বিছানার চারপাশে। রাহুলকে মায়ের কোলে এনে বসানো হল। সাদা-গোলাপি কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট শরীর, মাথায় নরম চুল, মুখে দুধের গন্ধ। পুজার হাত কাঁপছে, কিন্তু মনে আনন্দের ঢেউ।

সে ধীরে ধীরে রিকের ছোট্ট কব্জিতে রাখি পরিয়ে বলল—
“এই যে রিক, আজ থেকে তুই আমার ভাই। আমি তোকে সবসময় ভালোবাসব, রক্ষা করব, আর তুইও আমাকে সবসময় মনে রাখবি।”

বাবা হাসতে হাসতে বললেন—
“দেখ, রাখি বাঁধা হয়ে গেল, এবার তোকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, দিদির চোখে জল আনবি না কোনোদিন।”

মনে হল, রিক যেন চোখ খুলে একটু হাসল—যেন সেই প্রতিজ্ঞা সত্যি করল। সবাই হাসিতে ভরে গেল।

পুজা মনে মনে ভাবল—
“এবার আমার রাখি পূর্ণ হল। এই দিনটার মতো খুশি আমি জীবনে কোনোদিন হইনি।”

বিকেলের দিকে পুজা খাতায় লিখে রাখল—
“আজ ১৪ দিন বয়সে আমার ভাই প্রথম রাখি পরল।”

শৈশবের বন্ধন

রিকের বয়স যখন এক বছর ছুঁইছুঁই, তখনই পুজা তার জন্য এক মজার ডাকনাম বের করল—‘বালতি’। কারণ একদিন দুপুরে খেলার সময় রিক হেঁটে হেঁটে রান্নাঘরে ঢুকে একটা ছোট্ট প্লাস্টিকের বালতি মাথায় চাপিয়ে বসেছিল। সবাই হেসে লুটোপুটি খেয়েছিল, আর সেই দিন থেকে নাম হয়ে গেল বালতি

রিক বড় হতে হতে এই নামের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেল। পুজা যতবারই বলত—
“এই বালতি, এদিকে আয়!”
রিক ততবারই ছোট্ট পায়ের শব্দ তুলে দৌড়ে আসত, যেন ডাক শুনলেই তার সব কাজ ফেলে দিত।

দুজনের বয়সের ফারাক আট বছর হলেও সম্পর্কের বন্ধন ছিল একেবারে সমবয়সী বন্ধুদের মতো। পুজা স্কুল থেকে ফিরেই বই-খাতা সরিয়ে রিককে নিয়ে বসত—কখনো গল্প শোনাত, কখনো পুতুল খেলা করত, কখনো আবার রঙ পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকত।

chatgpt image aug 8, 2025, 11 57 19 pm

একদিন বিকেলে পুজা পড়াশোনা করছিল, রিক এসে তার খাতায় আঁকিবুঁকি শুরু করল। পুজা একটু রাগ দেখাল—
“আরে বালতি, আমার হোমওয়ার্ক নষ্ট করছিস কেন?”
রিক দুষ্টুমি ভরা হাসি হেসে বলল—
“দিদি, আমি তো আর নষ্ট করিনি, আমি তোর লেখার পাশে ছবি এঁকেছি।”

পুজা হেসে ফেলল। রাগ যেন গলে গেল মুহূর্তেই।

রাখির সময় হলে পুজা নিজেই রঙিন সুতো, কাগজের ফুল আর ছোট মুক্তোর দানা দিয়ে রাখি বানাত। রিক আগ্রহভরে বসে থাকত, কখন তার কব্জিতে বাঁধা হবে সেই রাখি। বাঁধা হয়ে গেলে গম্ভীর মুখে বলত—
“এখন থেকে আমি তোর বডিগার্ড।”
পুজা হেসে বলত—
“বডিগার্ড না, তুই আমার বালতি গার্ড।”

শৈশবের এই খুনসুটি আর নির্ভেজাল ভালোবাসায় দিন কেটে যাচ্ছিল। বয়সের পার্থক্য কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি—বরং পুজা সবসময় মনে করত, রিকই তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, আর রিকও দিদির কথা ছাড়া কিছু ভাবতে পারত না।

দূরত্বের শুরু

পুজার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ। ফলও ভালো হয়েছে। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিলেন—পুজাকে শহরে পাঠানো হবে উচ্চশিক্ষার জন্য। তাদের ছোট্ট মফস্বলে এমন সুযোগ নেই, তাই পুজাকে হোস্টেলে থেকে পড়তে হবে।

খবরটা শুনে রিকের মুখ কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। তখন তার বয়স মাত্র দশ বছর, কিন্তু মনের ভেতরে এই কথা গেঁথে গেল—দিদি আর প্রতিদিন তার সঙ্গে থাকবে না।

রাখিবন্ধনের কয়েক মাস আগেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল—নতুন জামা, বই, লাগেজ। পুজা আনন্দের সঙ্গে সব গুছিয়ে নিচ্ছিল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বুঝতে পারছিল—রিক যেন ধীরে ধীরে চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে।

যাওয়ার আগের রাতে রিক চুপচাপ এসে পুজার ঘরে বসে রইল। পুজা জিজ্ঞেস করল—
“কি রে বালতি, এত চুপচাপ কেন?”
রিক মুখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল—
“দিদি, তুই গেলে আমি কার সঙ্গে খেলব? কে আমাকে পড়াবে? কে আমার সঙ্গে গল্প করবে?”

পুজা বুকের ভেতরটা হঠাৎ ভারী হয়ে এল। সে রিককে জড়িয়ে ধরল—
“শোন বালতি, আমি দূরে থাকলেও তোকে ভুলে যাব না। প্রতিদিন ফোন করব। রাখির দিন তোকে রাখি পাঠাবো। তুইও আমার জন্য কিছু করবি, কথা দে।”
রিক চুপচাপ মাথা নেড়ে সম্মতি দিল, কিন্তু চোখের কোণে জল চিকচিক করছিল।

যাওয়ার দিন সকালে বাবা-মা, রিক সবাই মিলে পুজাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিতে গেল। রিক সারা পথ একবারও হাসল না, শুধু দিদির হাত শক্ত করে ধরে রইল। বিদায়ের সময় সে দিদির হাত ছাড়তে চাইছিল না।

পুজা হোস্টেলের দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানাল, কিন্তু রিকের চোখে তখনো জল। বাড়ি ফিরে সেদিন রাতে রিক একা বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। দিদি ছাড়া ঘরটা যেন অচেনা লাগছিল।

পুজাও হোস্টেলের নতুন বিছানায় শুয়ে কেঁদেছিল। মনে হচ্ছিল, ছোট্ট ভাইটা তার জীবনের একটা বড় অংশ, যাকে না দেখে থাকা খুব কঠিন।

ভাইয়ের ত্যাগ

পুজা শহরের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা শুরু করল। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ—সবকিছুই নতুন। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায় ফোনের ওপারে একটাই কণ্ঠস্বর তার মন ভালো করে দিত—রিকের।

রিক তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। বয়স কম হলেও দিদির জন্য তার মনে ছিল এক অদ্ভুত দায়িত্ববোধ। জানত, শহরে থেকে পড়াশোনা করা মানে খরচ বেশি, তাই নিজের সামান্য খরচ থেকেও দিদিকে সাহায্য করার চেষ্টা করত।

প্রতিদিন স্কুলে টিফিনের জন্য বাবা যে দশ টাকা দিতেন, রিক তার অর্ধেক খরচ করত না। চিপস বা সমুচা না কিনে সে টাকা ছোট্ট একটা কৌটায় জমাত। মাসের শেষে যখন পুজা ছুটি কাটাতে বাড়ি আসত, রিক গর্ব করে সেই কৌটাটা এগিয়ে দিত—

“দিদি, তুই এটা রাখ। তোর বই কিনতে লাগতে পারে।”

পুজা অবাক হয়ে বলত—
“বালতি, তুই কেন খাওয়া বাদ দিয়ে টাকা জমাচ্ছিস? তোর তো টিফিন খাওয়ার কথা।”
রিক গম্ভীর মুখে উত্তর দিত—
“দিদি, আমি তো ঠিক আছি। কিন্তু তুই শহরে একা পড়ছিস, তোকে সব লাগবে।”

এই ছোট ছোট ত্যাগ পুজার মনে গভীর দাগ কাটত। সে বুঝতে পারত, সম্পর্কের প্রকৃত শক্তি শুধু বড় বড় কাজের মধ্যে নয়—এমন ছোট্ট, নির্লোভ ভালোবাসার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।

একবার শীতের ছুটিতে পুজা বাড়ি ফিরেছিল। সে লক্ষ্য করল, রিক তার পুরোনো সোয়েটার পরে আছে, যেটা একটু ছোট হয়ে গেছে। পুজা জিজ্ঞেস করল—
“নতুন সোয়েটার তো মা বলেছিল কিনবে, তুই নিলি না কেন?”
রিক লাজুকভাবে বলল—
“আমি বলেছি, আমার লাগবে না। ওই টাকা দিয়ে তোর রুমের জন্য একটা টেবিল কিনে দিতে বলেছি, যাতে তুই ভালো করে পড়তে পারিস।”

পুজা তখন আর কথা বলতে পারেনি, শুধু ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিল। মনে হচ্ছিল, রিক তার ছোট ভাই হয়েও যেন অনেক বড় মানুষের মতো আচরণ করছে।

এইভাবেই, দূরত্বে থেকেও তাদের সম্পর্ক যেন আরও শক্ত হয়ে উঠছিল—কারণ ত্যাগ আর ভালোবাসা সব বাধা পেরিয়ে দুজনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছিল।

অসুস্থতার দিন

সেই বছর রাখির ক’দিন আগেই পুজা অসুস্থ হয়ে পড়ল। জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্বলতা, এমনকি কয়েকদিন স্যালাইনও নিতে হল। বাবা-মা শহর থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে এলেন, যাতে নিজের বিছানায়, নিজের ঘরে কিছুটা আরাম পায়।

শরীর খারাপ হলেও পুজার মনে ছিল একটাই কথা—এবারের রাখি হাতছাড়া করা যাবে না। দিন গুনে গুনে সে অপেক্ষা করছিল, কবে রিকের কব্জিতে রাখি বাঁধবে।

রাখির সকালে মা বললেন—
“পুজা, তুই তো এখনও ভালোভাবে দাঁড়াতেও পারছিস না। রাখি না করলেও চলবে, রিক বুঝবে।”

পুজা হেসে মাথা নেড়ে বলল—
“না মা, আমার ভাইয়ের হাত আজ খালি থাকবে না। আমি যত অসুস্থই হই না কেন, এই দিনটা আমি মিস করব না।”

দুপুরের দিকে রিক স্কুল থেকে ফিরে সোজা দিদির ঘরে ঢুকল। পুজাকে দেখে মুখ ম্লান হয়ে গেল—
“দিদি, তুই এতটা দুর্বল হয়ে গেছিস! থাক, আজ রাখি না পরালেও হবে।”

পুজা মৃদু হাসল, কম্বলের নিচ থেকে ছোট্ট থালা বের করল—তার মধ্যে রাখা ছিল রঙিন রাখি, কিছু মিষ্টি আর ফুলের পাপড়ি। ধীরে ধীরে উঠে বসল, হাত কাঁপতে কাঁপতে রিকের কব্জিতে রাখি বাঁধল।

“এই যে বালতি, আজও তোকে কথা দিচ্ছি—আমি সবসময় তোর পাশে থাকব।”

রিক চুপচাপ দিদির হাত ধরল—
“আর আমি কথা দিচ্ছি, তুই অসুস্থ হলে আমি তোকে কখনো একা থাকতে দেব না।”

ঘরটা যেন এক অদ্ভুত আবেগে ভরে গেল। বাবা-মা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, চোখে গর্ব আর ভালোবাসার মিশ্র ঝিলিক।

সেদিন সবাই বুঝেছিল—রাখি কেবল রঙিন সুতো নয়, এটা এক অটুট প্রতিজ্ঞা, যা ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ দিয়ে বাঁধা।

নতুন পথ, একই ভালোবাসা

সময় থেমে থাকে না। বছর কেটে গেল, পুজা উচ্চশিক্ষা শেষ করে ভালো একটি চাকরি পেল। কিছুদিন পরেই তার বিয়ে ঠিক হল।
বাড়িতে সাজসাজ রব—শঙ্খধ্বনি, আলপনা, ফুলের গন্ধে ভরে উঠল আঙিনা।

বিয়ের আগের রাতে রিক এক কোণে চুপ করে বসে ছিল। চোখে যেন কেমন এক শূন্যতা।
পুজা এসে পাশে বসল—
“কি রে বালতি, চুপ করে আছিস কেন?”

রিক একটু কষ্টের হাসি দিয়ে বলল—
“তুই তো কাল থেকে অন্য বাড়ির মানুষ হয়ে যাবি, দিদি। রাখির দিনে তো আর তুই আমার জন্য রঙিন সুতো নিয়ে বসে থাকবি না…”

পুজা মমতা ভরা দৃষ্টিতে ভাইয়ের হাত ধরল—
“শোন, রাখি শুধু সুতো নয়, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমি যত দূরেই থাকি, তুই আমার কাছে সবসময় সেই ছোট্ট ভাই রিক, আর আমি তোর বালতি দিদি। নতুন পথেও এই ভালোবাসা বদলাবে না।”

রিক চুপচাপ মাথা নেড়ে বলল—
“তুই দেখিস, আমি তোকে মিস করলে ট্রেনে করে চলে আসব। আর তোর জন্য নতুন নতুন রাখি কিনে রাখব, যাতে তুই এলেই আমার কব্জি খালি না থাকে।”

বিয়ের দিন পুজা লাল শাড়ি পরে, সিঁথিতে সিঁদুর নিয়ে যখন বিদায় নিল, রিক তার হাত শক্ত করে ধরে রাখল।
পুজা চোখের জল লুকিয়ে হাসল—
“এই হাত ছাড়িস না, শুধু দূরত্ব বাড়ুক, দূরত্বের ফাঁকটা নয়।”

বছর ঘুরে আবার এল রাখি পূর্ণিমা। পুজা এবার শ্বশুরবাড়ি থেকে এল শুধু এক দিনের জন্য। সকালের ট্রেন থেকে নেমে সোজা ভাইয়ের কাছে। রিকের হাতে রাখি বাঁধার মুহূর্তে যেন সব বছর, সব দূরত্ব মিলিয়ে গেল।

বাইরের আকাশে সেদিন নীল মেঘের ফাঁক দিয়ে রোদ ঝলমল করছিল—ঠিক তেমনই তাদের সম্পর্কের আকাশে রঙিন আলো ছড়িয়ে ছিল অটুট ভালোবাসার।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *