কফি হাউসের সেই বৃষ্টিভেজা বিকেল অনির্বাণের জীবনের সবথেকে রঙিন অধ্যায়টা শুরু হয়েছিল কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায়, আর শেষ হয়েছিল ঠিক সেখানেই, তবে এক ধূসর বিকেলে। কলকাতা তখন বর্ষায় ভিজেছে। ট্রামলাইনের ওপর জল জমেছে, আর ছাতার জঙ্গল পেরিয়ে কফি হাউসের দোতলায় জানলার ধারের টেবিলটা দখল করা তখন একটা যুদ্ধজয়ের সমান। অনির্বাণ তখন সবে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করছে।…
ধুসর বিকেল, নীরবতার দেওয়াল শহরতলির এই ছোট্ট লাইব্রেরিটা ছিল নন্দিনীর কাছে এক সুরক্ষিত আশ্রয়। পুরনো বইয়ের মলাট আর ধুলো মেশানো গন্ধ – এই গন্ধেই যেন তার অভিমানী মন শান্তি পেত। বাইরে আকাশে বৃষ্টি নামলে ভিজে কাঠের জানলায় যে জলবিন্দুগুলো জমে উঠত, ঠিক সেইভাবেই নন্দিনীর ভেতরে জমে ছিল এক বছরের অব্যক্ত কষ্ট। নন্দিনীর অভিমান তীব্র, কিন্তু…
ধুলোমাখা তাকে এক মুহূর্তের থমকে যাওয়া শরতের সেই দুপুরটা ছিল অদ্ভুত। কলেজ স্ট্রিটের চিরন্তন ভিড় আর কোলাহলকে যেন মেঘে ঢাকা আকাশটা কিছুটা হলেও শান্ত করে দিয়েছিল। বাতাসের ধুলো আর পুরনো কাগজের মিষ্টি গন্ধ—সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ। এই পরিবেশেই তার সবচেয়ে বেশি শান্তি। অরুণিমা (২৫), ইতিহাসের ছাত্রী, তখন পুরোপুরি মগ্ন একটি পুরোনো বইয়ের দোকানে। দোকানের…
স্থিরতার মোহ এবং সুন্দর মুখোশ অর্ণবের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল পরিমাপ করা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছিল নির্ভুল অঙ্কের মতো। বাইশ বছর বয়সে সে যে কর্পোরেট সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছিল, ছত্রিশ বছর বয়সে সে সেই সিঁড়ির একেবারে শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল—ধীরে, স্থিরভাবে, কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে। তার কাছে জীবন মানেই ছিল সরলতা, শৃঙ্খলা এবং নিশ্চিত ভবিষ্যৎ।…
সোনালী অতীত কলেজের শেষ সেমিস্টারের রাত ছিল সেটা। আর্কিটেকচার ব্লকের ছাদে বসে ছিল অরুণিমা আর শায়ান। কলকাতা তখনো জাগেনি, কিন্তু তাদের চোখে ছিল আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। সামনে ছড়ানো ছিল চার্লি ল্যান্ডিং স্টাডি মেটেরিয়ালস আর কফির কাপ। দমকা হাওয়ায় অরুণিমার চুল উড়ছিল, আর সেই চুলে আলতো হাত রেখে শায়ান বলেছিল, “দেখিস অরুণি, একদিন আমরা দু’জন মিলে…
জরুরি নিমন্ত্রণ ও ব্যাগবিভ্রাট ভোলাবাবু অর্থাৎ শান্তিবাবু হলেন ভুলে যাওয়ার জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। তাঁর ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা এতটাই কিংবদন্তি যে পাড়ার মুদি দোকানদারও তাঁকে জিজ্ঞেস করে, “ভোলাবাবু, তেল না নুন?”। কারণ, তিনি তেল চাইতে গিয়ে নুন কিনেছেন, নুন চাইতে গিয়ে কিনেছেন কেরোসিন। তবে আজ পরিস্থিতি অন্যরকম। আজ তাঁর ছোট ভাগ্নে রনিতের বিয়ে। এই প্রথম নিজের ভুলো…
ধুলোর আড়ালে একটি অসম্পূর্ণ প্রেম শুরু: ছোট্ট, মফস্বল শহর শান্তিপুরের প্রাণকেন্দ্রে, পুরোনো লাইব্রেরিটি দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। এই লাইব্রেরিই হলো কলেজ শিক্ষক দীপার দ্বিতীয় ঘর। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে বারবার টেনে আনে এই ধূসর, পুরোনো কাগজের ভিড়ে। শীতের নরম আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে লাইব্রেরির ভেতরের শান্ত পরিবেশে এক মায়াবী আভা…
বিচ্ছেদ ভালোবাসা যত গভীর হয়, বিচ্ছেদের ভয় ততটাই তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে।রণজয় আর মেঘলার দিনগুলো যেন স্বপ্নের মতো কেটে যাচ্ছিল।সকাল মানে মেঘলার হাসি, বিকেল মানে দু’জনের আড্ডা, আর সন্ধ্যা মানে একে অপরের কণ্ঠে মিশে থাকা ক্লান্তির মিষ্টি সুর। কিন্তু কেউ জানত না—সময় নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে, তাদের প্রিয়তমা গল্পে এক অপ্রত্যাশিত মোড় নিয়ে। সেই দিনটা ছিল ডিসেম্বরের…
প্রথম দেখা “বৃষ্টির ফোঁটায় ভেজা সকাল, আর আমি ভাবছি—প্রিয়তমা কোথায়, তুমি কি এখনও আমার অপেক্ষায় আছো?” শরতের এক নরম সকাল।কলকাতার রাস্তায় তখনও পুরো ভিড় জমেনি। গাছের পাতায় শিশিরের কণা, দূর থেকে ভেসে আসছে ট্রামের ঘণ্টা।আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘ, বাতাসে হালকা ঠান্ডা—একটা প্রশান্ত, নির্মল সকাল। এই সময়টায় রণজয় প্রায়ই কলেজে একটু আগে চলে আসে। ওর…
করিডোরের কোণে বসে থাকা মেয়েটি শীতের হালকা রোদ জানলার ফাঁক গলে মেঝেতে পড়ে আছে।স্কুলের পুরনো ভবনের করিডোরটা সবসময় একটু অন্ধকারচেরা গন্ধে ভরা — চকচকে টাইলস, পুরোনো দেয়ালে ঝুলে থাকা পোষ্টার, আর ভাঙা জানলার কাচে আটকে থাকা ধুলোর স্তর।দুপুরের ঘণ্টা বাজলেই এই করিডোর হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে যায়।মাঠের দিক থেকে ভেসে আসে ছেলেমেয়েদের হাসির আওয়াজ, খেলার চিৎকার,…
