ধূমকেতু
আকাশে অগ্নিশিখা
ডিসেম্বরের শেষ দিক। গ্রামের রাতগুলো তখন কুয়াশায় ভিজে থাকে। চারপাশে শীতের হিমেল হাওয়া, দূরের বাঁশবনের ফাঁক দিয়ে শেয়ালের ডাক ভেসে আসে। গ্রামটা যেন অচেনা নীরবতায় ডুবে আছে।
ঠিক তখনই, আকাশে হঠাৎ এক অদ্ভুত আলো। প্রথমে যেন কেউ বিশাল প্রদীপ জ্বেলে ধরেছে, তারপর ধীরে ধীরে সে আলো এক লেজ টেনে এগোতে লাগল। মানুষজন চমকে উঠল—“ধূমকেতু! ধূমকেতু দেখা দিয়েছে!”
বৃদ্ধারা আঁচল দিয়ে চোখ ঢাকলেন, কেউ কেউ হাত জোড় করে মন্ত্র পড়তে শুরু করল।
“এ তো অশুভ সংকেত,” বলল হরিধন কাকা। “বন্যা আসবে, দুর্ভিক্ষ নামবে।”
কেউ আবার বলল, “না না, এটা মহামারীর আগাম বার্তা।”
সারা গ্রাম যেন ভয়ে কাঁপতে লাগল।
কিন্তু সেই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন নামের তেরো বছরের এক কিশোরের চোখে ভয়ের কোনো ছাপ নেই। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
তার মনে হলো, এই আলো তাকে ডেকে বলছে—
“ভয় পেও না, অজানাকে জানতে শেখো। আমার লেজের আগুনেই লুকিয়ে আছে রহস্য।”
অয়নের বুক ধুকপুক করছে উত্তেজনায়। সে আস্তে বলল—
“আহা! কী সুন্দর! যেন আকাশে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। যদি একদিন ওটার রহস্য আমি নিজে আবিষ্কার করতে পারতাম!”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধু মিলন ভয়ে গলা কাঁপিয়ে বলল—
“অয়েন, তুই পাগল নাকি? সবাই বলছে সর্বনাশ আসবে, আর তুই উল্টোটাই ভাবছিস!”
অয়ন হেসে উত্তর দিল—
“মিলন, ভয় পেলে কিছু জানা যায় না। বইতে পড়েছি, ধূমকেতু আসলে মহাশূন্যের ভাসমান বরফ আর ধুলোর দেহ। পৃথিবীর কাছে এলেই এর লেজ আলোকিত হয়ে ওঠে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
মিলন মাথা নাড়ল। “তোর এসব পড়া কথা আমি বুঝি না। তবে সত্যি যদি সর্বনাশ না হয়, তোর কথাই ঠিক প্রমাণ হবে।”
আকাশে তখনও ধূমকেতু দীপ্ত হয়ে জ্বলছে। তার আলোয় গ্রামমাঠ ঝলমল করছে, খড়ের গাদার ওপরে পড়ছে সোনালি আভা।
অয়ন মনে মনে শপথ নিল—
“একদিন আমি আকাশের রহস্য খুঁজে বের করব। ভয় নয়, জ্ঞানই আমার পথপ্রদর্শক হবে।”
সেদিনের সেই রাত, সেই ধূমকেতুর আগমন, তার মনে অগ্নিশিখার মতো স্বপ্ন জ্বালিয়ে দিল।
স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা
ধূমকেতু দেখার রাতটা যেন অয়নের জীবনে নতুন একটা দরজা খুলে দিয়েছিল। সকালে উঠেই সে স্কুলের ব্যাগে গুঁজে দিল তার প্রিয় বিজ্ঞান বইটা—“মহাকাশের বিস্ময়”। বইটার পাতায় পাতায় নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতুর ছবি। স্কুলে ক্লাস শেষ হতেই মাঠে খেলতে যাওয়ার বদলে সে গোপনে লাইব্রেরিতে গিয়ে সেই বইয়ের পাতায় চোখ রাখল।
অয়নের বয়স তখন মাত্র তেরো, ক্লাস সেভেনে পড়ে। পড়াশোনায় খারাপ নয়, তবে তার আগ্রহ শুধু বিজ্ঞানেই। বাংলার খাতা বা অঙ্কের সূত্র তার কাছে নিস্তেজ লাগে, কিন্তু যখনই আকাশ কিংবা নক্ষত্রের ছবি চোখে পড়ে, তখন মনে হয় বুকের ভেতর থেকে আলো বের হচ্ছে।
বাবার আশা
অয়নের বাবা হরিপদ মিস্ত্রি। তিনি খেটে খাওয়া মানুষ, সারাদিন মাঠে চাষ করেন। সংসার টানাটানিতে চলে, কিন্তু হরিপদের আশা ছিল—ছেলেটা বড় হয়ে সংসারের ভার নেবে।
এক সন্ধ্যায় খেতে বসে হরিপদ বলল—
“অয়ন, এইসব আকাশ-তারা দেখে কী হবে? আমার সাথে কাল থেকে মাঠে নামবি। চাষাবাদ শিখতে হবে। বইপত্র দিয়ে পেট ভরে না।”
অয়ন চুপ করে রইল। সে বাবাকে আঘাত দিতে চায় না, কিন্তু তার বুকের ভেতরে যে আগুন জ্বলছে, তা মাটির চাষে নিভবে না।
মায়ের স্নেহ
রাতে সে মায়ের কাছে গিয়ে বলল—
“মা, তুমি বুঝো না কেন? আমি কৃষক হতে চাই না। আমি মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। আমি বিজ্ঞানী হব।”
মা নিঃশ্বাস ফেলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
“বাবা, আমি জানি তোর স্বপ্ন আছে। কিন্তু সংসারের কথা একটু ভাব। তোকে পড়াতে হলে অনেক টাকা দরকার, তোর বাবার একার পক্ষে কষ্ট।”
অয়ন মায়ের কোলে মাথা রেখে ফিসফিস করল—
“আমি নিজে উপায় বের করব মা। টিউশনি করব, বই ধার করে পড়ব, কিছু একটা তো হবেই। তুমি শুধু আমার পাশে থেকো।”
বন্ধুদের চোখে অয়ন
পরদিন স্কুলে অয়নের সহপাঠীরা তার ধূমকেতু-প্রেম নিয়ে হাসাহাসি করল।
“ওরে, অয়ন নাকি নক্ষত্রগণনা করবে! আগে পরীক্ষা পাস কর তো!”
কেউ কেউ তার খাতা ছিনিয়ে নিয়ে আঁকিবুঁকি করল।
কিন্তু অপমান তাকে থামাতে পারল না। বরং সে আরও জেদ ধরে বই পড়তে লাগল।
সেই রাতে গ্রামের মাঠ ফাঁকা হয়ে গেলে অয়ন লণ্ঠন হাতে ছাদে উঠে গেল। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে তখন ধূমকেতুর লেজ এখনও জ্বলজ্বল করছে।
সে মুঠি আঁকড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল—
“আমি একদিন ওই রহস্য উদঘাটন করব। বাবা-মা এখন বুঝবে না, বন্ধুরা মজা করবে, কিন্তু আমি থামব না।”
তার চোখে তখন ভয় নেই, আছে শুধু স্বপ্নের দীপ্তি।
কিন্তু বাস্তবতা তাকে ঘিরে আছে—অভাব, সমাজ, বাবার আপত্তি।
তবুও সে জানে, স্বপ্ন আর বাস্তবতার সংঘাতই মানুষকে বড় করে তোলে।
কুসংস্কারের বাঁধন
ধূমকেতুর আবির্ভাব যেন গোটা গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিল। দিন যত এগোতে লাগল, মানুষের ভীতি তত বাড়তে লাগল।
কারও জমিতে ফসল একটু শুকিয়ে গেলে বলল—“দেখলি তো? ধূমকেতুর সর্বনাশী প্রভাব শুরু হয়ে গেছে।”
কেউ অসুস্থ হলে অন্যরা ফিসফিস করে বলত—“এই সব ওই অগ্নিশিখার ফল।”
গ্রামের হট্টগোল
একদিন বিকেলে গ্রামমাঠে ঢাকঢোল বাজিয়ে ঘোষণা দেওয়া হলো—ধূমকেতুর অশুভ ছায়া দূর করতে মন্দিরে যজ্ঞ হবে। গ্রামের লোকেরা ধান-চাল, টাকা, এমনকি ছাগলও দান করতে লাগল।
বৃদ্ধ গোপাল কাকা গলা উঁচু করে বললেন—
“যজ্ঞ না করলে গ্রামে দুর্ভিক্ষ নামবে। দেবতাদের শান্ত করতে হবে।”
লোকজন ভয়ে গা গলিয়ে সম্মতি দিল।
অয়নের প্রতিবাদ
সবার ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অয়ন সাহস করে উঠে দাঁড়াল।
“এগুলো ভ্রান্ত ধারণা! ধূমকেতু কোনো সর্বনাশ ডেকে আনে না। এটা মহাশূন্যের একটি প্রাকৃতিক বস্তু। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি বরফ আর ধুলোর তৈরি। আলো দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
গ্রাম্য মণ্ডল তার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল—
“চুপ কর ছোকরা! তোরা স্কুলে দুটো বই পড়ে ভগবানকে অস্বীকার করিস। আমাদের বিশ্বাস ভাঙতে শিখাবি?”
অয়ন জেদি গলায় উত্তর দিল—
“আমি বিশ্বাস ভাঙছি না কাকা। আমি শুধু সত্য বলছি।”
বিদ্রূপ ও একাকীত্ব
লোকজন হেসে উঠল। কেউ বলল—
“ওই ছেলেটা অশান্তির মূল। দেবতাদের রাগাচ্ছে।”
আরও কেউ কানে কানে বলল—
“বড্ড মাথা গরম হয়েছে ছেলেটার। একদিন বিপদ নামবে ওর ঘরেই।”
অয়ন লজ্জায় মাথা নত করল, কিন্তু তার চোখে আগুন জ্বলছিল।
মিলন, তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাকে টেনে সরিয়ে নিল।
“তুই কেন সব সময় এমন করিস রে? সবাই তোকে পাগল বলে।”
অয়ন চুপচাপ আকাশের দিকে তাকাল। ধূমকেতুর ঝলমলে লেজ তখনও জ্বলছে।
সে মনে মনে বলল—
“তারা যত হাসুক, যত কুসংস্কার ছড়াক, আমি জানি জ্ঞানের আলোই সত্যি। আমি একদিন এদের ভুল প্রমাণ করব।”
অন্তর্দ্বন্দ্ব
সেদিন রাতে অয়ন ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে ছিল। বাইরে বাঁশবনের ফাঁক দিয়ে ধূমকেতুর আলো এসে তার ঘরের জানালায় পড়ছিল।
একদিকে বাবার ইচ্ছা, সমাজের কটূক্তি, দারিদ্র্যের শেকল।
অন্যদিকে তার স্বপ্ন—আকাশ ছোঁয়ার অদম্য তৃষ্ণা।
তার বুকের ভেতরে তখন কেবল একটা কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল—
“কুসংস্কারের বাঁধন ভেঙেই একদিন সত্যি মুক্তি পাবে।”
প্রতিকূলতার আগুন
ধূমকেতুর আতঙ্ক আর যজ্ঞের আয়োজনের কয়েকদিন পর, হরিপদ মিস্ত্রি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ি ফিরল।
“শোন অয়ন,” সে ধমক দিল, “আমি শুনেছি তুই নাকি গ্রামের লোকজনের সামনে যজ্ঞের বিরোধিতা করেছিস! এত সাহস হলো কী করে? বইয়ের দু’পাতা পড়ে এখনি তুই জ্ঞানী হয়ে গেছিস?”
অয়ন চুপ করে ছিল। বাবার রাগ সে বোঝে, কিন্তু তার ভেতরে যে সত্যের প্রতি টান, তা সে অস্বীকার করতে পারল না।
হরিপদ আবার বলল—
“কাল থেকে স্কুল-টুল সব বন্ধ। মাঠে নামবি। জমি না শিখলে তোদের বংশ শেষ হয়ে যাবে। আমি ছেলে হারাতে চাই না।”
মায়ের চোখে জল চলে এলো। তিনি কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু হরিপদের কঠিন দৃষ্টি দেখে থেমে গেলেন।
মাটির ভার আর ছেলের স্বপ্ন
পরদিন সকাল। অয়ন হাতে কাঁচি আর লাঙল ধরল, বাবার সঙ্গে মাঠে নামল। শীতের সকালের কুয়াশায় মাটির গন্ধ তার নাকে লাগছিল, কিন্তু তার মন দূরের আকাশে।
বাবা তাকে দেখাল কিভাবে ধান গাঁথতে হয়, কিভাবে জমি চাষ করতে হয়।
অয়ন চেষ্টা করল, কিন্তু তার মনে হচ্ছিল—সে যেন নিজের স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।
মিলন পাশের জমি থেকে চিৎকার করে বলল—
“ওরে অয়ন! তুই বই পড়া ছেড়ে এখন সত্যিই কৃষক হয়ে যাচ্ছিস নাকি?”
অয়ন কোনো উত্তর দিল না। বুকের ভেতর জেদটা আরও বেড়ে গেল।
আলোয়ের পথ
সেই রাতে, চাষের ক্লান্তি নিয়েও অয়ন বই খুলল। ধূমকেতু নিয়ে লেখা অধ্যায় পড়তে পড়তে তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।
সে জানল, একেকটা ধূমকেতু আসতে শত শত বছর লাগে। মানে, সে যে ধূমকেতু দেখছে, সেটা আবার তার জীবদ্দশায় দেখা নাও যেতে পারে।
মনে মনে সে বলল—
“যদি আমি এর রহস্য নিয়ে কাজ করতে পারি, তবে আমার জীবন সত্যি হবে।”

বিজ্ঞান মেলার সুযোগ
কিছুদিন পর স্কুলে খবর এলো—উপজেলায় বিজ্ঞান মেলা হবে। শিক্ষক বললেন, প্রত্যেকে চাইলে একটি প্রকল্প জমা দিতে পারবে।
অয়ন চোখ চকচক করে উঠল। সে ঠিক করল, নিজের হাতে একটা ছোট টেলিস্কোপ বানাবে।
রাতের পর রাত সে বাঁশের পাইপ, লেন্স, পুরনো আয়না জোগাড় করল। মা তাকে চুপিচুপি সাহায্য করলেন।
“সবাই যদি না-ই বোঝে, তুই তোর স্বপ্ন আঁকড়ে ধর,” মা ফিসফিস করে বললেন।
অবশেষে মেলার দিন এলো। অয়ন টেলিস্কোপটা নিয়ে হাজির হলো। বিচারকেরা তাকিয়ে অবাক হলেন—
“এত কম উপকরণে এত সুন্দর জিনিস বানালে কীভাবে?”
অয়ন উজ্জ্বল চোখে উত্তর দিল—
“কারণ আমার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া, স্যার।”
আশার আলো
বিচারক দলের একজন নামী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি অয়নের দিকে তাকিয়ে ধীরে বললেন—
“তুমি প্রতিভাবান ছেলে। তোমার জন্য আমরা বৃত্তির ব্যবস্থা করব। পড়াশোনা থামিও না।”
অয়নের বুক কেঁপে উঠল। যেন ধূমকেতুর আলো তার সামনে আবার জ্বলে উঠেছে।
ধূমকেতুর আলো
বছর ঘুরল। সময় অয়নের জীবনকে এক নতুন পথে নিয়ে গেল। বিজ্ঞান মেলার সেই ছোট্ট টেলিস্কোপই তার ভাগ্য বদলে দিল। অধ্যাপকের দেওয়া বৃত্তিতে সে শহরে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেল।
অভাব, কষ্ট, টিউশনি—সবকিছুর ভেতর দিয়েই অয়ন এগোতে লাগল। অনেক রাত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে বসে আকাশ দেখত। দূরের তারা, নীহারিকা, আর মাঝে মাঝে ঝলসে যাওয়া উল্কাপাত তাকে মনে করিয়ে দিত সেই গ্রামের রাতটিকে—যখন প্রথম ধূমকেতু দেখেছিল।
তার মনে হতো, ধূমকেতুই তাকে তাড়া দিচ্ছে—“থেমো না, এগিয়ে চলো।”
সাফল্যের দীপ্তি
অবশেষে বহু বছর পর অয়ন জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু করল। ধূমকেতুর গঠন, তার লেজের গ্যাস, বরফ ও ধূলিকণার রহস্য—সবকিছু নিয়ে তার লেখা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলো।
সংবাদপত্রে তার ছবি ছাপা হলো—“গ্রামের ছেলে আজ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী।”
গ্রামে ফিরে আসা
একদিন অয়ন ছুটি নিয়ে গ্রামে ফিরল। সেই পুরনো মাটির বাড়ি, সেই কাঁচা রাস্তা, সেই গাঁয়ের মাঠ—সব যেন তাকে শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিল।
গ্রাম্য মণ্ডল, যিনি একদিন তাকে তিরস্কার করেছিলেন, এখন গর্বের সুরে বললেন—
“দেখো, অয়ন আমাদের গ্রামের মান উঁচু করল।”
অয়নের বাবা হরিপদ কিছুটা লজ্জিত হলেও চোখের কোণে গর্ব লুকোতে পারলেন না।
মা চুপচাপ ছেলের হাত ধরে বললেন—
“আমি জানতাম, তুই একদিন আকাশ ছুঁবিই।”
ধূমকেতুর স্মৃতি
সেই রাতে অয়ন আবার উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। ধূমকেতু আর নেই, আকাশ শান্ত। কিন্তু তার মনে হলো, সেই জ্বলন্ত লেজ এখনও কোথাও জ্বলে আছে, তার ভেতরের আগুনে।
সে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে আস্তে বলল—
“ধূমকেতু ধ্বংসের নয়, আশার আলো। তুমি-ই আমার পথ দেখিয়েছ।”
চোখের কোণে অশ্রু জমল, কিন্তু মুখে এক প্রশান্ত হাসি ফুটে উঠল।
অবশেষে অয়ন বুঝল—
স্বপ্ন যত বড়ই হোক, যদি সাহস থাকে তবে প্রতিকূলতার আগুন পেরিয়েই তাকে ধরা যায়।